About Panchagarh
অপরূপ বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। পঞ্চগড় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বলে এই জেলাকে বলা হয় ‘হিমালয় কন্যা’। পঞ্চগড় অর্থ – পঞ্ছ(পাচ) গড়ের সমাহার। ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড় এই পাঁচটি গড়ের সমন্বয়ে গঠিত এই জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি দ্বারা বেষ্টিত। বিগত কয়েক দশকে চা উৎপাদনে বিশেষ করে অর্গানিক চা উৎপাদনের লক্ষ্যে চা বাগান তৈরি হওয়ার পর থেকে উত্তর বঙ্গের এক অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
পঞ্চগড় নামকরনে রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে অনেকেই মনে করেন যে, এ অঞ্চলটি প্রাচীনকালে পুন্ডুনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। পঞ্চগড় অর্থ – পঞ্ছ(পাচ) গড়ের সমাহার। গড়গুলো হচ্ছে, ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় ও দেবেনগড়। এই অঞ্চলের নাম যে, পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।
প্রাচীন যুগ থেকে এই পঞ্চগড় জনপদের আশেপাশে ছিল মগধ, মিথিলা, গৌড়, নেপাল, ভুটান, সিকিম, ও আসাম রাজ্য। ষোড়শ শতকে কুচবিহার রাজ্য গঠন হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কোচবিহার রাজ্যের শাসক দ্বারা এই পঞ্চগড় অঞ্চলটির নিরিহ মানুষ শাসিত হয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত পঞ্চগড় থানা হিসেবে যুক্ত ছিল। ১৯৮০ সালে ১লা জানুয়ারী পঞ্চগড় মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ৫ টি থানা গুলো হল- তেতুলিয়া,পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। পঞ্চগড় জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব আ.স.ম. আব্দুল হালিম।
ভৌগলিক অবস্থানঃ পঞ্চগড় জেলার আয়তন প্রায় ১,৪০৪.৬২ বর্গ কি.মি. বা ৫৪২.৩৩ বর্গমাইল। বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের স্থানাঙ্ক প্রায় ২৬.২৫° উত্তর ৮৮.৫০° পূর্ব। পঞ্চগড় জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের জন্য স্যার সিরিল রেডক্লিফের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলার তিনদিকে প্রায় ১৮০ মাইল বা ২৮৮ কি.মি. জুড়ে ভারতের সীমান্ত অবস্থিত। পঞ্চগড় জেলার মাটি বালুকাময়, জলাভূমি এবং পুরাতন হিমালয় বেসিনের মাটির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট (৪৬ মিটার)।
Panchagarh in a glance
Coordinates | 26.25°N , 88.50° E |
Area | 1404.63 km² |
Boundary | 302.68 km |
Time zone | BST (GMT +6) |
Temperature | 30.2°C (max), 10.1° C (min) |
Rainfall | 2931 mm |
City Corp. | 1 |
Upazila | 5 |
Union | 43 |
Village | 850 |
Mouza | 463 |
Population | 8,38,000 |
Rivers | 23 |
Storage Facility |
| ||
Commodity | No. of Godown | Capacity (M.Ton) | |
Food | 18 | 12400 | |
Seed | 2 | 205 | |
Fertilizer | 2 | 4000 |
” The existence of fifteen garhs (fortifications) has hitherto been traced, of which the most noted are Bhitargarh, Hosaingarh, Mirgarh, Rajangarh and Devengarh. Panchagarh is named after these five garhs “
মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকাঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় কালে পঞ্চগড় জেলা ৬নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন – উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার(এপ্রিল ১০, ১৯৭১ – এপ্রিল ৬, ১৯৭২)। সীমান্ত পরিবেষ্টিত ও ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে সংঘটিত হয়েছে ব্যাপক যুদ্ধ।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪টি মুক্ত অঞ্চল ছিল যেখানে পরিকল্পনা প্রণয়নে খুব ভালো ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে একটি। ২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চার দিক থেকে পাক বাহিনীর উপর ঝড়ো আক্রমন শুরু করে এবং ২৯ শে নভেম্বর পঞ্চগড় পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়।এই জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী মোট ৫৪ জন।
দর্শনীয় স্থান
- বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট
- বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর
- তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো
- ভিতরগড়
- মহারাজার দিঘী
- বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির
- মির্জাপুর শাহী মসজিদ
- বার আউলিয়া মাজার
- গোলকধাম মন্দির
- সমতল ভূমিতে চা বাগান
- রকস্ মিউজিয়াম
অর্থনীতি: এই জেলাতে সর্বপ্রথম শিল্পের প্রসার ঘটে পঞ্চগড় সুগার মিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। পরবর্তীতে আরও কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে তার মধ্যে রয়েছেঃ
- পঞ্চগড় সুগার মিলস লিঃ (১৯৬৯)
- জেমকন লিমিটেড (১৯৯৩)
- জেমজুট লিমিটেড (২০০৩)
- মার্শাল ডিস্টিলারী (১৯৯৬)
ইদানিংকালে এই জেলার অর্থনীতিক উন্নয়নে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে চা চাষ। বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ এর প্রচলন শুধুমাত্র এই জেলাটি রয়েছে। কৃষিতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা হিসেবে চাষ চাষ বড় জায়গা করে রেখেছে। পঞ্চগড়ে বিভিন্ন খোলা জায়গা এবং জেলার প্রায় আনাচে-কানাচে চা বাগান গড়ে উঠেছে এই জেলাতে মোট ১৮ টি চা বাগান রয়েছে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- আগা টি এস্টেট, তেঁতুলিয়া
- করতোয়া চা বাগান, জগদল সাতমেরা
- কাজী এন্ড কাজী চা বাগান
- গ্রীন কেয়ার চা বাগান, বুড়াবুড়ি
- ডাহুক চা বাগান, বুড়াবুড়ি
- ময়নাগুড়ি চা বাগান, তেঁতুলিয়া রোড
- পঞ্চগড় চা কোম্পানী, বুড়াবুড়ি
- কাজী ফার্মস লিঃ বুড়াবুড়ি, তেঁতুলিয়া
- স্যালিলেন টি এস্টেট
- এম এম টি এস্টেট, হাড়িভাসা
- আর ডি আর এস চা বাগান, জগদল
- গ্রীন গোল্ড চা বাগান লিঃ দশমাইল, সাতমেরা
- হক টি এস্টেট, লোহা কাচি, তেতুলিয়া
- নাহিদটি এস্টেট, ভদ্রেশ্বর, ভজনপুর, তেঁতুলিয়া
- আরিব টি এস্টেট, জিয়াবাড়ী
- জেসমিন টি এস্টেট, কালান্দিগঞ্জ মাঝি পাড়া, তেঁতুলিয়া
- কুসুম টি এস্টেট, শালবাহান রোড, মাঝিপাড়া, তেঁতুলিয়া
- জেড এন্ড জেল টি এস্টেট, অমরখানা
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব: প্রথম মুসলিম বঙ্গ বিজয়ী সেনাপতি একটি আর উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজী যখন তিব্বত অভিযান শুরু করে তখন তিনি পঞ্চগড় জনপদে এর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছেন বলে জানা যায়। সুলতান হোসেন শাহ, কামতার রাজা নীলধ্বজ দুজনই তেঁতুলিয়া থানার দেবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছে বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। এছাড়াও সুলতান জালাল উদ্দিন ফাতেশাহ, সুলতান বারবক শাহ, শেরশাহ, খুররম খাঁ (শাহজাহান), মীরজুমলা, সুবাদার ইব্রাহীম খাঁ ফতে জঙ্গ এবং অন্ত মধ্যযুগে দেবী চৌধুরাণী, ভবানী পাঠক, ফকির মজনুশাহ প্রভৃতি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পঞ্চগড় জনপদের নাম ও স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত।
- বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম
- ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান
- কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ
- ব্যারিস্টার এড. জমিরউদ্দীন সরকার
- মির্জা গোলাম হাফিজ
- চিত্রনায়ক আব্দুর রহমান
নদ-নদী: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, পঞ্চগড়ে মোট ২২ টা নদ ও নদী রয়েছে, পঞ্চগড়ের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীর নামঃ
করতোয়া, তালমা, চাওয়াই, পাঙ্গা, কুরুম, পাম, পাথরাজ, ঘোড়ামারা, মরা তিস্তা, আতরাই, ভূল্লী, নাগর, সিংগিয়া, বহু, রসেয়া, মহানন্দা, ডাহুক, তিরনই, রনচন্ডি, বেরং, জ়োড়াপানি ও সাও।