মহারাজার দীঘি – Maharajar Dighi

পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক পুকুরের নাম মহারাজার দীঘি (Maharajar Dighi)। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এই বিশালায়তনের জলাশয় পঞ্চগড় শহরের উত্তর-পূর্ব কোণে অমরখানা ইউনিয়নে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১৫ শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই দিঘী পর্যটকদের বরাবরই আকৃষ্ট করে।

মহারাজার দিঘির আয়তন প্রায় ৫৪ একর। দিঘীর পাড়সহ উত্তর-দক্ষিণে ৮০০ গজ ও পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। খরা মৌসুমে পানির গভীরতা থাকে ৪০-৫০ ফুট। বর্ষা মৌসুমে এই গভীরতা আরো বেড়ে যায়। প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে ঐতিহাসিক ভিতরগড় দুর্গনগরীর দৃশ্যমান স্থাপনার অধিকাংশই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও এখনো টিকে রয়েছে ঐতিহাসিক মহারাজার দিঘী।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া থেকে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। দিঘির চারপাশের সুউচ্চ প্রশস্ত পাড় দিয়ে বৃক্ষরাজির ছায়ায় হেঁটে হেঁটে পর্যটকেরা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন প্রকৃতির মধে। সেই সঙ্গে দিঘীর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এর প্রবেশপথের দুই পাড়ের দুটি সিঁড়ি। কেউবা নৌকায় ঘুরে বেড়ান দিঘীর পানিতে। শীতকালে দিঘীর পাড়ের সবুজ গাছগাছালিতে অতিথি পাখির কলকাকলি দিঘীর পাড়ে তৈরি করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের দিন দিঘীর পাড়ে মেলা বসে। সব বয়সের ছেলেমেয়ে ও বয়োবৃদ্ধদের পদচারণায় মুখরিত হয় পাড়। দিঘীর চারপাশ সবুজ গাছের সমারোহে সারাক্ষণই পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে।

মহারাজার দিঘীর ইতিহাস

ইতিহাস ও স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য মতে ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলেশ্বর রাজার ভিতরগড় দুর্গনগরীর সীমানা ছিল। এটি ছিল তার রাজধানী। কামরুম বুরুঞ্জীতে রাজা জলেশ্বরকে বলা হয় পৃথু রাজা। মহারাজার দিঘী থেকে মাত্র ১৩৫ মিটার দুরে পৃথু রাজার বাড়ি ছিল বলে অনেকের ধারণা। ভিতরগড় দুর্গনগরীর বাইরের আবেষ্টনীর উত্তরাংশ, উত্তর-পশ্চিমাংশ এবং উত্তর-পূর্বাংশে বর্তমানে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা। প্রাচীন বাণিজ্য সড়ক ও নদীপথের ওপর অবস্থিত হওয়ায় ভিতরগড় এলাকার অধিবাসীরা সম্ভবত নেপাল, ভুটান, সিকিম, আসাম, কোচবিহার, তিব্বত, চীন, বিহার এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিল।

১৮০৯ সনে স্যার ফ্রান্সিস বুকানন প্রত্নস্থল জরিপ করেন এবং সেখানের অধিবাসীদের কাছ থেকে ধারণা করা হয়, ষষ্ঠ শতকের শেষে কিংবা সপ্তম শতকের শুরুতে ভিতরগড় একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। রাজ্য পরিচালনার পাশাপাশি ভিতরগড়ে পৃথু রাজা নির্মাণ করেছিলেন রাজপ্রসাদ ও মন্দির। খনন করেন বিশাল এই দিঘীর। যা মহারাজার দিঘীর নামে পরিচিতি। সময়ের ব্যবধানে পৃথু রাজা কিচক নামের অসাধু ও নিম্নবর্ণের জনগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজ পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় পরিবার পরিজনসহ মহারাজার দিঘীতে আত্মহত্যা করেন। সেই সাথে অবসান ঘটে পৃথু রাজার রাজত্বের।

স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, একসময় স্থানীয় লোকজন বিয়েশাদির অনুষ্ঠান আয়োজন করলে, আগের দিন দিঘীর পাড়ে গিয়ে থালাবাসনের কথা বলে আসতে হতো। অনুষ্ঠানের জন্য দিঘীর পাড়ে অদৃশ্যভাবে প্রয়োজনমতো চলে আসত থালাবাসন। ব্যবহারের পরে তা পরিষ্কার করে ফেরত দিতে হতো। এ ছাড়া পারিবারিক বা সাংসারিক নানান সমস্যা নিয়ে দিঘীর পাড়ে মানত করেও ভালো ফল পেতেন স্থানীয় লোকজন। তবে এখন সেই চিত্র না থাকলেও বিশাল দিঘীর জলরাশিজুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্য।

কিভাবে আসবেন ?

পঞ্চগড় শহর থেকে মহারাজার দিঘী দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। স্থানীয়ভাবে যেতে চাইলে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে তেঁতুলিয়াগামী বাসযোগে বোর্ড অফিস নামক স্থান হয়ে রিক্সা/ভ্যান যোগে পূর্বদিকে ৫ কিলোমিটারের পথ। এছাড়া পঞ্চগড় থেকে প্রাইভেট কার/মাইক্রো ভাড়া করে, মহারাজার দীঘি পৌঁছানো সহজতর। …Travel Tips | Accommodation

মহারাজার দিঘীর অবস্থান


Last updated: 29th October, 2023
Photo Courtesy: Firoz Al Sabah | Zoha Photography

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

Photo

পঞ্চগড় শহরের উত্তর-পূর্ব কোণে অমরখানা ইউনিয়নে মহারাজার দিঘীর অবস্থান