দেবীগঞ্জ উপজেলা - Debiganj Upazila

দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি বিজড়িত, করতোয়া নদী বিধৌত দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় জেলার অন্যতম একটি উপজেলা।

নামকরণঃ দেবীগঞ্জ এর নামকরণের ইতিহাস নিয়ে ২ টি ধারণা পাওয়া যায়। প্রথমত হিন্দু অধ্যুসিত এ জনপপদে অনেক দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া যেত। এ সব দেব-দেবীর নাম থেকে দেবীগঞ্জ নামের উৎপত্তি। দ্বিতীয় ধারণাটির মতে, সন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী- দেবী চৌধুরানীর অবাধ বিচরণ স্থল ছিল এই এলাকাটিতে। এখানকার ঘন বনাঞ্চলে প্রবাহিত করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়ুম নদীর বাঁকে বাঁকে বৃটিশদের সাথে কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দেবী চৌধুরানী বিজয়ী হন এবং এখানকার অধিবাসীদের আশা- ভরসা ও শৌর্য বীর্যের প্রতীক হয়ে উঠেন। দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি থেকে এ অঞ্চলের নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ। দেবী চৌধুরানীর প্রধান সহযোগী ভবানী পাঠক এর নামে নিকটস্থ আরেকটি এলাকার নামকরণ করা হয়েছে ভবানীগঞ্জ।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তনঃ দেবীগঞ্জ উপজেলা পঞ্চগড়ের দক্ষিণ পূর্ব এলাকায় ২৬°০০´ থেকে ২৬°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৯´ থেকে ৮৮°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ স্থানাঙ্কে অবস্থিত। এ উপজেলার উত্তরে বোদা উপজেলাপঞ্চগড় সদর উপজেলা, দক্ষিণে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা ও খানসামা উপজেলা ও নীলফামারী সদর উপজেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমে বোদা উপজেলা ও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা অবস্থিত। পঞ্চগড় সদর উপজেলার আয়তন ৩০৯.০২ বর্গ কিমি বা ১১৯ বর্গ মাইল।

প্রশাসনিক এলাকাঃ দেবীগঞ্জ উপজেলা ১ টি পৌরসভা, ১০ টি ইউনিয়ন, ১০০ টি মহল্লা/মৌজা এবং ১০১ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। দেবীগঞ্জ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের নামঃ

(১) চিলাহাটি ইউনিয়ন
(২) চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়ন
(৩) টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়ন
(৪) দণ্ডপাল ইউনিয়ন
(৫) দেবীগঞ্জ ইউনিয়ন
(৬) দেবীডুবা ইউনিয়ন
(৭) পামুলী ইউনিয়ন
(৮) শালডাঙ্গা ইউনিয়ন
(৯) সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন
(১০) সোনাহার ইউনিয়ন

জনসংখ্যাঃ ২০১১ এর আদমশুমারি তথ্য অনুসারে পঞ্চগড় সদর উপজেলার জনসংখ্যা ছিল মোট ২.২৪,৭০৯ জন। পুরুষ ১,১৩,১২০ জন এবং মহিলা ১,১১,৫৮৯ জন। এ উপজেলায় সাওঁতাল, ওরাওঁ, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠির বসবাস রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

(ক) নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬)
(খ) দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২)
(গ) সুকাতু প্রধান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩)
(ঘ) শালডাংগা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪)
(ঙ) সোনাহার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪)
(চ) টেপ্রীগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫)
(ছ) পামুলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬)
(জ) বাগদহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭)
(ঝ) দেবীগঞ্জ অলদিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০)
(ঞ) পিড়াফাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪)
(ট) বিনয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫)
(ঠ) ভাজনী দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮২)

ইতিহাসঃ দেবীগঞ্জ সহ পঞ্চগড় জনপদ ছিল কোচবিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। ১৭১১ সালে মোঘল ও কোচবিহার রাজার মধ্যে সন্ধি হয়। রাজা রূপ- নারায়ন কোচবিহার রাজ্য সন্ধিসূত্রে লাভ করেন। ১৭৭৬ সালে মোঘলদের ফকিরকুন্তি নামক ফৌজদারী অঞ্চল প্রাচীন রংপুর জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৫৭ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে তিনটি মহকুমা সৃষ্টি করা হয় এবং এর সর্ব উত্তরের মহকুমার নাম হয় তেঁতুলিয়া। এই তেঁতুলিয়া মহকুমার মধ্যে ছিল বোদা চাকলা এবং দেবীগঞ্জ জনপদ ছিল বোদা চাকলার অধীন। ১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও মহকুমার আটোয়ারী থানাসহ ৫টি থানা নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলা গঠিত হয় ও দেবীগঞ্জ উপজেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে দেবীগঞ্জঃ মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে গরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নভেম্বর মাসে ডিয়াগাড়িতে পাকসেনারা ১৮ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। …পঞ্চগড় সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা | পঞ্চগড়ের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা

দেবীগঞ্জ উপজেলার দর্শনীয় স্থানঃ

(ক) কুচবিহার রাজার কাচারী ও অবকাশ ভবন
(খ) ডিসি পার্ক
(গ) চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু
(ঘ) ময়নামতির চর
(ঙ) জগদ্বন্ধু মন্দির
(চ) শালডাংগা মন্দির
(ছ) গোলকধাম মন্দির
(জ) খয়ের বাগান
(ঝ) সাহেব বাড়ি মসজিদ
(ঞ) চন্দ্রিমা উদ্যান
(ট) বুরুজের ডাংগা
(ঠ) ভাইলাগঞ্জ মসজিদ
পঞ্চগড়ের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ

নদীঃ দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১০টি নদী রয়েছে। দেবীগঞ্জের বিল ও দীঘির মধ্যে কোচের দীঘি, বিন্নার দীঘি, সুন্দর দীঘি, হাড়িয়ার দীঘি, ঢাঙ্গীর হাট দীঘি, পানিশালা দীঘি, কালপীর দীঘি ও কমলা দীঘি উল্লেখযোগ্য।

(১) করতোয়া নদী
(২) আত্রাই নদী
(৩) পাথরাজ নদী
(৪) ছাতনাই নদী
(৫) বুড়ি তিস্তা নদী
(৬) কালিদহ নদী
(৭) বাংগা নদী
(৮) খরখরিয়া নদী
(৯) কুড়ুম নদী
(১০) ভুল্লী নদী
পঞ্চগড় জেলার নদ-নদী

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বঃ দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেনঃ

(ক) দেবী চৌধুরাণী
(খ) শফিউল আলম প্রধান
(গ) শরিফুল ইসলাম
(ঘ) শাহেদ শাফায়েত
(উ) আলী ছায়েদ
পঞ্চগড়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

অর্থনীতি ও শিল্প কারখানাঃ দেবীগঞ্জ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৬৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৫%, ব্যবসা ৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮৭%, চাকরি ৩.০১%, নির্মাণ ০.৫৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৩.৪৫%। এছাড়া দেবীগঞ্জে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার রয়েছে।

(ক) পঞ্চগড় অর্থনৈতিক অঞ্চল
(খ) বীজ উৎপাদন কেন্দ্র
(গ) বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়
(ঘ) দেবীগঞ্জের প্রধান কৃষিজাত পণ্য ধান, পাট, গম, আলু, হলুদ, আদা, চিনাবাদাম, শাকসবজি।
(ঙ) প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, জলপাই।
(চ) প্রাকৃতিক সম্পদ নুড়ি পাথর, সিলিকা বালু।
(ছ) প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আলু, চিনাবাদাম, নুড়িপাথর, সিলিকন বালু।
(জ) দেবীগঞ্জের স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প ও দারুশিল্প উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প।
পঞ্চগড়ের শিল্প ও বাণিজ্য

হাটবাজার ও মেলাঃ দেবীগঞ্জ উপজেলায় দেবীগঞ্জ হাট, কালীগঞ্জ হাট, ভাওলাগঞ্জ হাট, শালডাংগা হাট. ধুলাঝারী হাট, ফুলবাড়ী হাট, সোনার হাট, লক্ষ্মীর হাট, মল্লিকাদহ ক্লাবের হাট উল্লেখযোগ্য। শিব চতুর্দশী স্নান মেলা দেবীগঞ্জের উল্লেখযোগ্য মেলা।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ দেবীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নির্মিতি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু পঞ্চগড় জেলার যোগযোগ ব্যবস্থার অন্যতম অবকাঠামো। দেবীগঞ্জের পাকারাস্তা ১১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৬ কিমি; নৌপথ ৩৫ কিমি। দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের দূরত্ব ৪০ কিমি। সড়ক পথে দেবীগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৩৭০ কিমি এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিমি। Travel Tips | Accommodation | Tourist Spots


Last updated: 27 March 2024

Leave a Reply

Today's Weather

Recent News

Facebook Page