মির্জা গোলাম হাফিজ – Mirza Ghulam Hafiz

মির্জা গোলাম হাফিজ ছিলেন একজন বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মির্জা গোলাম হাফিজ ২ জানুয়ারি ১৯২০ সালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মির্জা আজিম উদ্দীন সরকার। মির্জা হাফিজ রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি  (বিএনপি)’র বর্তমান (২০২৩) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চাচা।

মির্জা গোলাম হাফিজ ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের জলপাইগুঁড়ি জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। পরে তিনি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাংলা প্রাদেশিক শাখার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৫-৪৭ সালে ন্যাশনাল গার্ডের উপ-প্রধান বা নায়েবে সালারে সুবা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া, বোদা, দেবীগঞ্জ এবং পাটগ্রাম এ পাঁচটি থানাকে পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মির্জা গোলাম হাফিজ। পরে র‌্যাডক্লিফ কমিশন থানাগুলোকে পাকিস্তানভুক্ত করে। নাগরিক অধিকারের প্রবক্তা মির্জা গোলাম হাফিজ ১৯৪৮-৫৮ সালে আন্তর্জাতিক সিভিল লিবার্টিজ লীগের পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৫১-৫৮ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রী দলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম হাফিজ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ১৯৫২ সালে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে গোলাম হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন।

মির্জা গোলাম হাফিজ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে সরকারের ৯২-ক ধারা জারীর প্রতিবাদে গড়ে উঠা আন্দোলনকালে তিনি কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে মির্জা গোলাম হাফিজ পূর্ব পকিস্তান বার কাউন্সিল এবং নিখিল পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। গোলাম হাফিজ ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীপক্ষে আইনি সহায়তা প্রদান করেন।

মির্জা গোলাম হাফিজ ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় ভূমি প্রশাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-এর প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সংসদে তিনি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনাব হাফিজ ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালে সংঘটিত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যাকারী অভ্যুত্থান পর্যন্ত সংসদের স্পিকার স্পীকারের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯১ সালের নিবাচনে মির্জা গোলাম হাফিজ পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

মির্জা গোলাম হাফিজের স্ত্রী ডাঃ আবেদা হাফিজ নিজেও একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৬২ সালে ডাঃ আবেদা হাফিজ প্রথম বাঙালি নারী হিসাবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

মির্জা গোলাম হাফিজ শিক্ষার অগ্রগতি ও সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মির্জা গোলাম হাফিজ এবং আবেদা হাফিজ একসাথে আটোয়ারী উপজেলায় মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, পঞ্চগড় শহরে ড. আবেদা হাফিজ গার্লস স্কুল, মির্জাপুর শিশুসদন ও মওলানা আজিমউদ্দিন মাদ্রাসা, তেঁতুলিয়ায় মির্জা গোলাম হাফিজ হাইস্কুল ও ডিগ্রি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

তাছাড়াও তাঁরা দুজনে একটি গ্রন্থাগার, সারা দেশে বেশ কয়েকটি মসজিদ, ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার থানায় নয়েরহাট মির্জানগরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মির্জা পরিবার বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমল ইস্টার্ন মমতাজ প্লাজাও প্রতিষ্ঠা করেছিল।

জনাব হাফিজ ১৯৯৫ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। মির্জা গোলাম হাফিজ ২০ ডিসেম্বর ২০০০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

 


Last updated: 28 November 2023

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

মির্জা গোলাম হাফিজ
(২ জানুয়ারি ১৯২০ – ২০ ডিসেম্বর ২০০০)

  • আইনজীবী
  • সংসদ সদস্য
  • ভূমি প্রশাসন মন্ত্রী
  • আইনমন্ত্রী
  • বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার