পঞ্চগড়ের নদী - Rivers of Panchagarh

নদীমাতৃক বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের জনজীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নদ-নদীগুলির অববাহিকায় গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের ইতিহাস ও জীববৈচিত্র। পঞ্চগড় প্রধান খনিজ সম্পদ নুড়ি পাথর ও বালু’র প্রধান উৎস হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বহমান পঞ্চগড়ের প্রধান নদীগুলি। কৃষিকাজ, সেচ, মৎস্য উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানীয় জলের সরবারহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই নদীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তালমা ও ঘোড়ামারা নদী অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। করোতোয়া, তালমা, চাওয়াই, পাঙ্গা, কুরুম, পাম নদী বাড়িয়েছে পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনযাত্রার গতি। প্রতিদিন করতোয়া সেতুকে কেন্দ্র করে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রয়েছে চোখে পড়ার মতো। করতোয়া সেতুর পারেই গড়ে উঠেছে পঞ্চগড় শহর। দেবীগঞ্জ উপজেলায় নদীর সংখ্যা জেলাটির অন্যান্য স্থানের তুলনায় নেহায়েত কম। চারটি নদী বয়ে চলেছে এই উপজেলাকে কেন্দ্র করে। তিস্তা, আতরাই ও ভল্লী নদীর সৌন্দর্যের দেখা মিলবে এই উপজেলায়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় গেলেই নজরে পড়বে ঘোড়ামাড়া নদী ও পাথরাজ নদী। ছোট্ট এই উপজেলার কৃষিকাজের বেশিরভাগের প্রয়োজনীয় পানির জোগান দেয় এই নদী দু’টি। পঞ্চগড়ের নানা ইতিহাস বহন করছে আটোয়ারী উপজেলার নাগর, সিংগিয়া, বহু ও রসেয়া নদী। নদীগুলোর নাম যেমন ভিন্ন রূপও তেমন মুনোমুগ্ধকর। এই নদীগুলোর দুই পাশ দিয়ে দেখা মেলে ফসলের মাঠ আর সবুজের সমারোহ। কাঞ্চনজঙ্ঘার সন্নিকটে দেশের সর্ব উত্তর-পশ্চিমের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি নদী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তেঁতুলিয়ার মনোমুগ্ধকর রূপে বাড়তি সৌন্দর্য্য সংযুক্ত করেছে এখানকার নদীগুলি। মহানন্দা, ডাহুক, তীরনই, রণচন্ডি, বেরং, জোড়াপানি ও শাঁও নদী তেঁতুলিয়ার অলংকার।

পঞ্চগড়ের নদীর অনেকগুলো নদী বিভিন্ন বিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, আবার কিছু নদী বিল থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে বিখ্যাত মহারাজার দীঘি, ময়দানদিঘী, কাজলদিঘী, ধাপঢুপ বিল এবং শালমারা বিল।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত প্রকৃতির সমারোহে পরিবেষ্টিত পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক নদনদী। পঞ্চগড় ভূখণ্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর উৎস মূলত ভারতের পাহাড়ী অঞ্চল। পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলায় আন্তঃসীমান্ত এবং অভ্যন্তরীণ ৪৯ টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলিতে আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে অভিহিত করা হয়।

পঞ্চগড় জেলার ৮ টি আন্তঃসীমান্ত নদীঃ

(১) মহানন্দা নদী (২০ কিমি)
(২) করোতোয়া নদী (১১২.৫ কিমি)
(৩) ডাহুক নদী (১২.৫ কিমি)
(৪) তালমা নদী (২৭ কিমি)
(৫) ঘোড়ামারা নদী (৭ কিমি)
(৬) বুড়িমরা তিস্তা নদী (৭৬ কিমি)
(৭) টাঙ্গন নদী (২৫.৫ কিমি)
(৮) নাগর নদী (৩৯.৫ কিমি)

পঞ্চগড় জেলার তালিকা বহির্ভূত ১১ টি আন্তঃসীমান্ত নদীঃ

(৯) বেরং নদী (১১.৫ কিমি)
(১০) কুরুম নদী (৩৬ কিমি)
(১১) চাওয়াই নদী (২৭ কিমি)
(১২) চাউলি নদী (৩৫ কিমি)
(১৩) ভেরসা নদী (১২.৫ কিমি)
(১৪) গোবরা নদী (৫ কিমি)
(১৫) রনচণ্ডী নদী (৪ কিমি)
(১৬) যমুনা নদী
(১৭) পাঙ্গা নদী
(১৮) আলাইকুমারী নদী
(১৯) ভাতা নদী
(২০) শাঁও নদী (৪.৫ কিমি)

পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরীণ ২৯ টি নদীঃ

(২১) কালিদহ নদী (৫ কিমি)
(২২) খড়খড়িয়া নদী (১০ কিমি)
(২৩) ঘাগড়া নদী
(২৪) পাম নদী (৪.৫ কিমি)
(২৫) সুই নদী (১৩.৫ কিমি)
(২৬) ছাতনাই নদী (১৯ কিমি)
(২৭) জোড়াপানি নদী
(২৮) রাঙ্গাপানি নদী
(২৯) দারা নদী
(৩০) ধুল্লি নদী
(৩১) বহু নদী
(৩২) বাঘমারা নদী
(৩৩) বোরকা নদী (৬.৫ কিমি)
(৩৪) হাতুড়ি নদী
(৩৫) পাথরাজ নদী
(৩৬) পাম নদী
(৩৭) পেটকি নদী (৯ কিমি)
(৩৮) রসেয়া নদী (১৩.৫ কিমি)
(৩৯) পাইকানি নদী
(৪০) তিস্তাভাঙ্গা নদী
(৪১) বহিতা নদী
(৪২) শালমারা নদী
(৪৩) চিলকা নদী
(৪৪) জারী নদী
(৪৫) কাটগিরি নদী
(৪৬) সিংগিয়া নদী
(৪৭) হুয়ারী নদী
(৪৮) ঝিনাইকুঁড়ি নদী
(৪৯) তীরনই নদী (৪ কিমি)

২০২৫ সালের পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, সময়ের সাথে সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে পঞ্চগড়ের ছোট-বড় প্রায় ৫০টি নদীর ওপর। জেলার অধিকাংশ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে। ভারত তাদের অভ্যন্তরে দেওয়া বাঁধসহ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে নদীর পানি নিজস্ব সেচ কাজে ব্যবহার করায় পঞ্চগড়ের নদীগুলোতে ভরা মৌসুমে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। জেলায় পানির স্তর কমে যাওয়ার পাশাপাশি নদীগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ কমে আসায় পঞ্চগড়ের একাধিক নদী শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে, পানির অভাবে বিলীনের পথে আজ নদীগুলো।

পঞ্চগড়ের নদীতে পানি স্বল্পতার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নদীনির্ভর কৃষক ও শ্রমিকদের। একইসঙ্গে মাছসহ জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়েছে নদীর ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুগুলো। আর ভরাট নদীর চরকে কৃষি জমি হিসেবে ব্যবহার করছে স্থানীয় নিম্নআয়ের মানুষরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫০ টাকা ব্যয়ে জেলার ১৭৮.৫০ কিমি পূর্ণ খনন করা হয়।


Last updated: 15 March 2025

Today's Weather

Recent News

Facebook Page