কাঞ্চনজঙ্ঘা – Kangchenjunga

কাঞ্চনজঙ্ঘা - Kangchenjunga
নেপালের পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের সিকিম সীমান্ত।

উইকিপিডিয়াঃ কাঞ্চনজঙ্ঘা
ম্যাপঃ Google Map

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো হতে ১৪০ কিমি দূরে নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এমনভাবে আকাশপটে ভেসে উঠে, যেন তেঁতুলিয়ার দিগন্তের কোলেই এ শৃঙ্গ দাঁড়ানো। প্রাকৃতিক নৈসর্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অসংখ্য পর্যটক তেঁতুলিয়ায় ভ্রমণ করতে আসেন। তেঁতুলিয়ার বিস্তীর্ণ চা-বাগানের সবুজ গালিচার মধ্যে সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ। দেশের সীমানা পেরিয়ে যাঁদের এ পর্বত দেখার সুযোগ হয় না, তাঁরা শীতের সময় ছুটে আসেন সীমান্তঘেঁষা মহানন্দা নদী সংলগ্ন অপরূপ সৌন্দর্যে লীলাভূমি নামে খ্যাত তেঁতুলিয়ায়

কাঞ্চনজঙ্ঘার পরিচিতিঃ হিমালয় পর্বতমালার কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ভারতের উচ্চতম, নেপালের দ্বিতীয় উচ্চতম এবং বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। পঞ্চগড় নামকরণ যেমনটি পাঁচটি গড়ের নাম অনুসারে হয়েছে, ঠিক তেমন ভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘা নামটি নেপালের স্থানীয় শব্দ কাং চেং জেং গা থেকে এসেছে। যার অর্থ তুষারের পাঁচটি ধন-ভাণ্ডার। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতটি মূলত পাঁচটি চূড়ার সমন্বয়ে গঠিত। এর প্রতিটিতে একটি করে ধন-ভাণ্ডার রয়েছে। এগুলি যথাক্রমে স্বর্ণ, রুপা, রত্ন, শস্য এবং পবিত্র গ্রন্থ। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের ইতিহাস হাজার বছর পুরানো। নেপালের স্থানীয় সংস্কৃতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা একটি পবিত্র পর্বত। হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

কখন যাবেনঃ রোদের আলোয় চিকচিক করতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করার জন্য শীতই সবচেয়ে সেরা সময়। শীতকালের শুরুতে শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর) ও শীতের শেষে বসন্ত (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে ভালো সময়। শীতের শুরুর দিকে যখন আকাশ মেঘ ও কুয়াশামুক্ত থাকে তখন তেঁতুলিয়া এবং পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে খালি চোখেই এই পর্বতশৃঙ্গের অপরূপ রূপ দেখা যায়। শীত পরবর্তী বসন্তে তুষার এবং বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে উঠে আরো সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক।

তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার থেকে দৃশ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘা

তেঁতুলিয়া হতে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর ও বিকেল বেলা। তেঁতুলিয়ার আকাশে ভোরের প্রথম আলোয় স্পষ্ট দেখা মিলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। যখন ভোরের প্রথম কিরণ কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করে তখন শ্বেতশুভ্র এই পর্বতশৃঙ্গটি পোড়ামাটির রূপ নেয়। সূর্যের আলোর সঙ্গে কখনো শুভ্র, গোলাপি আবার কখনো লাল রং নিয়ে হাজির হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসলে, তখন কাঞ্চনজঙ্ঘার রং হয় সাদা, যেন আকাশের বুকে একখণ্ড বরফ। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দিনের অন্য সময়েও দেখা যায় তুষার শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা।

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে সন্ধ্যার আকাশে দেখা মেলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল। কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে যে কালচে পাহাড় দেখা যায় সেটি পাহাড়ের ঢালে ভারতের প্রসিদ্ধ শহর দার্জিলিং। পাহাড়ের চূড়া ছাড়াও, ভারতের কালিম্পং শহরের যানবাহন চলাচল এবং বৈদ্যুতিক আলো, দার্জিলিংয়ের মহকুমা সদর দপ্তর এবং রাতে প্রদর্শিত ভারতের সীমান্ত বাহিনীর ওয়াচ লাইট তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকা থেকে উপভোগ করা যায়। ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে মেঘের মধ্যে বিরল-সূর্যাস্ত আরেকটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সন্ধ্যায় মহানন্দা নদীর তীরে বসে এই দৃশ্য দেখতে পান পর্যটকরা। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার তৎসংলগ্ন তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর সার্বিক দৃশ্য আরও বেশী মনোরম রূপ ধারণ করে।

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ভিউ-পয়েন্টঃ তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের ডাকবাংলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীরে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ডাকবাংলোপিকনিক কর্নার। ডাকবাংলোর বারান্দা থেকেই দূরের দিগন্তরেখায় দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেঁতুলিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাংলাবান্ধা, বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতু, ভিতরগড় থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।

পঞ্চগড় শহর থেকে দেখার ভিউ-পয়েন্টঃ পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গায় দাড়ালে খুব ভোরে মেঘ ও কুয়াশামুক্ত নীল আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের খালি চোখেই এঁকে দেয় বিস্ময়ের চিহ্ন। পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুতে দাঁড়ালে কিংবা শহরের কোনো উঁচু দালানে দাঁড়িয়ে উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। পঞ্চগড় জেলা-শহর থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে সড়ক থেকে কখনো সামনে, কখনো ডানে আবার কখনো বাঁয়ে দেখা মিলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য। মূলত সমগ্র পঞ্চগড় থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি দেখা মিলে পান্ডিম, কুম্ভকর্ণ, সিনিওলচুসহ আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ।

কিভাবে যাবেনঃ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসি ও নন–এসি বাসে পঞ্চগড়ে যাওয়া যায়। অধিকাংশ বাসের শেষ গন্তব্য থাকে তেঁতুলিয়া। রেলপথেও যাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করে। পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে চলে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পর্যন্ত আকাশপথেও আসা যায়। সেখান থেকে পঞ্চগড়ে আসতে হবে সড়কপথে। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিমি। বাস কিংবা অন্য বাহনে পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরে যাওয়া যায় খুব সহজেই। আরো পড়ুন…পঞ্চগড়ে কিভাবে যাবেন

কোথায় থাকবেনঃ পঞ্চগড়ে পর্যটন কেন্দ্রিক আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সরকারিভাবে রয়েছে আবাসন সুবিধা। জেলা শহরে রয়েছে সার্কিট হাউসসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের গেস্টহাউস। বেসরকারিভাবে পঞ্চগড়ে রয়েছে সেন্ট্রাল গেস্টহাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রিতম, অগ্রদূত প্যালেস, এইচ কে প্যালেস, ধানসিঁড়ি সহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। …আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের সকল আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস

তেঁতুলিয়ায় রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও বাংলো। মহানন্দা নদী ঘেঁষে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত শতবর্ষ পুরোনো তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো। ব্রিটিশ আমলের এই ডাকবাংলো বর্তমানে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো হিসেবে পরিচিত। আগেভাগে যোগাযোগ করে এই ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুলিশের অফিসার্স মেস, উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্স, সড়ক ও জনপদের গেস্টহাউস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গেস্টহাউস, বন বিভাগের গেস্টহাউস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া তেঁতুলিয়ায় বেসরকারিভাবে হোটেল দোয়েল, স্কয়ার হোটেল, স্বপ্ন গেস্টহাউস, কাঠের বাড়ি গেস্টহাউস, হোটেল সীমান্তের পাড়, হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাজী ব্রাদার্স এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও পরিচালিত মহানন্দা কটেজসহ রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। …আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের সকল আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস

আরো পড়ুন… পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ | তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো | অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর | বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর | বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টমুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া | মহারাজার দীঘিভিতরগড় 


ছবিঃ ফিরোজ আল সাবাহ
ভিডিওঃ Travel Boy Hafiz
Last updated: 3 October 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn