ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো এবং বন বিভাগের ৩০০ একরের বিশাল বনাঞ্চলের পাশে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার পঞ্চগড়ের পর্যটন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার তেঁতুলিয়া উদ্যান ও বনভোজন কেন্দ্রকে পুনর্নির্মাণ করে তৈরী করা হয় বর্তমানের তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার। নির্মল ও সুন্দর পরিবেশের তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার বনভোজনের জন্য সমগ্র উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়। পর্যটকরা তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণারে দাঁড়িয়ে মহানন্দা নদী, শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন, ওপারে সীমানায় প্রতিবেশী ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, সার্চলাইট, চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য এবং তুষার ও বরফ আচ্ছাদিত সাদা শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপবৈচিত্র খুব চমৎকারভাবে উপভোগ করেন।
ভৌগলিক অবস্থাগত কারণে পর্যটন খাতে তেঁতুলিয়া উপজেলা সারাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত দেশী-বিদেশী ভ্রমণপিপাসু হাজারো পর্যটক তেঁতুলিয়া উপজেলা দর্শনের জন্য ভ্রমণ করে থাকেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে দুই দেশকে বিভক্তকারী গঙ্গার একমাত্র উপনদী মহানন্দা। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র মহানন্দা নদীর গা ঘেঁষে সুউচ্চ টিলার উপর অবস্থিত জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ও তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো।
তেঁতুলিয়া আগত সকল পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ও ডাকবাংলো এলাকা। ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে পুরনো দুটি ভবনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত অত্যাধুনিক এবং সুসজ্জিত বেরং কমপ্লেক্স ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বেরং কমপ্লেক্সের পাশে একটি কাঠের কটেজ তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও পর্যটকদের বিনোদন জন্য ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণারের একটি পরিত্যক্ত ঘরকে অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে অনেক দেশী- বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। শীতকালের শুরু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেই বেড়ে যায় মানুষের আনাগোনা।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের ঐকান্তিক সহযোগিতা এবং চৌকষ সৃজনশীলতায় তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণারে পর্যটক আকর্ষণের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খচিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ চত্বর, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি, শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য বসার বেঞ্চ ও দোলনা নির্মাণ, স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও বাউন্ডারি ওয়াল, পিকনিক কর্ণারের গেট, হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দর্শনে সুদৃশ্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ এবং চারপাশে রাস্তা ও গাইড ওয়াল, কমিউনিটি হলরুম ও কমপ্লেক্স, নতুন ডাইনিং রুম, ঝরণা ফোয়ারা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস (এই স্থানে সকল সেবা- যেমন, ডেকোরেটর, সাউন্ড সিস্টেম, হোটেল বুকিং, খাবার ও পানি সরবরাহ এবং পর্যটন সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা) এবং নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা।
তেঁতুলিয়া পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণারের সাথে নির্মিত হয়েছে ইকোপার্ক। চিরিয়াখানার আদলে এই ইকোপার্কে আনা হয়েছে হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী। এর সাথে এখানকার সবুজ চা, পাথর, হস্তশিল্প পর্যটনে আলাদা মাত্রা যুক্ত করেছে। এছাড়াও উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে চৌরাস্তা বাজারটিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ, পার্কিং এরিয়া নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বৃক্ষরোপন, ওয়াকওয়ে, উন্মুক্ত মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর তর্জনী, মাল্টিপারপাস হার্ট শেড ও এশিয়া হাইওয়ে বাইপাস রোডে স্থাপিত হয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণীসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য ও ফলক।
তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারের আকর্ষণঃ আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটন মুখী করার লক্ষ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের একাধিক উদ্যোগ ও সৃজনশীল পরিকল্পনায় নির্মিত নতুন নতুন স্থাপনায় তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার এবং তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোকে আকর্ষণীয় রূপ দেওয়া হয়েছে।
- পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার চুড়া দেখা।
- মহানন্দা নদীর আকর্ষণীয় সৌন্দর্য।
- ২০০ মিটার প্রশস্ত মহানন্দা নদীর অপরপাশে ভারত।
- মহানন্দা নদীতে শ্রমিকদের পাথর তোলার অপরূপ দৃশ্য।
- বর্ষাকালে মহানন্দা নদীর মনোরম দৃশ্য।
- কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ভিউ পয়েন্ট।
- ডাকবাংলো প্রাঙ্গনের শতবর্ষী গাছ, সমতল ভূমির চা-বাগান।
- ইকো পার্ক, হার্ট শেড, তেঁতুলিয়া লাভ কর্নার এবং ওয়াচ টাওয়ার।
- আবহমান বাংলার চিত্তাকর্ষক দৃশ্য।
- গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঢেকি, কৃষক-কৃষাণী।
- বঙ্গবন্ধুর তর্জনী, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ চত্বর, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি।
- স্বাধীনতার তীর্থভূমি তেঁতুলিয়া।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও লালন ফকিরের ভাস্কর্য।
- অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর।
- তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট, চা কন্যার ভাস্কর্য।
- মহানন্দা ডাইনিং হল, কমিউনিটি হলরুম ও কমপ্লেক্স।
- তোঁতা পাখি, হাতি, চিতাবাঘ, বানর, খোরগোশের ভাস্কর্য।
- শিশুদের খেলার জন্য দোলনা, স্লিপার, নাগরদোলা।
- তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো (থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ)।
- অত্যাধুনিক বেরং কমপ্লেক্স (থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ) এবং নবনির্মিত কাঠের কটেজ।
- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট (তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার থেকে দূরত্ব ১৭ কিমি)।
অবস্থানঃ তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো বা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো পাশে অবস্থিত। তেঁতুলিয়া উপজেলা বাসস্ট্যান্ড হতে ১.৪ কিমি দূরত্বে তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা সড়কের বাম পাশে এর অবস্থান।
কিভাবে যাবেনঃ পঞ্চগড় জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে ধাক্কামারা মোড় থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার বাসে সহজেই তেঁতুলিয়া পৌঁছে যাবেন। তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ড হতে অটো ভ্যান ভাড়া নিলে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ১০ মিনিটের পথ। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন স্থান বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া ভালো। সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে। …Travel Tips | Accommodation | Tourist Spots
কখন যাবেনঃ সীমান্তঘেঁষা মহানন্দা নদী সংলগ্ন অপরূপ সৌন্দর্যে লীলাভূমি নামে খ্যাত তেঁতুলিয়ায় সারাবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারও পর্যটকের আগমন ঘটে। বিশেষ করে শীতকালের শুরুতে (অক্টোবর-নভেম্বর) ও শীতের শেষে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) প্রাকৃতিক নৈসর্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এবং পিকনিক খেতে অসংখ্য পর্যটক তেঁতুলিয়ায় ভ্রমণ করতে আসেন। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার তৎসংলগ্ন তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর সার্বিক দৃশ্য আরও বেশী মনোরম রূপ ধারণ করে।
প্রবেশ ফিঃ তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ নেই। দর্শনার্থীদের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার নিরিখে সর্বনিম্ন প্রবেশ ফি ধার্য করা আছে। সর্বসাধারনকে প্রবেশ ফি-এর টিকিট ক্রয় করে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারে প্রবেশ করতে হয়। পর্যটকদের যানবাহন পার্কিং-এর ফি দিতে করতে হয়।
ছবিঃ আরিফ বিল্লাহ । মামুন খান | হাসান আল বন্না
Last updated: 24 February 2024