মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও তেঁতুলিয়া পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছে অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ভরপুর সংগ্রহশালা, মুক্তিযুদ্ধকালীন দুর্লভ ছবি ও স্থানীয় কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে অলংকিত জাদুঘরটি খুব সহজেই নজর কাড়ে পর্যটকদের। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর একটি পরিত্যক্ত ঘরকে এই অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘরে রূপ দিয়েছেন তেঁতুলিয়ার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা।
অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর বাইরে থেকে মূলতঃ একটি লাল-সবুজে ঘেরা টিনশেড ঘর। ঘরের সামনের দেওয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, ওপরের দেওয়ালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বাংলার কৃর্তিমান দামাল ছেলেদের দুর্লভ ছবিতে সাজানো। অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর-এর ১১টি গ্যালারি জুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের স্থিরচিত্র। সেই ১১টি গ্যালারির রয়েছে বিষয়ভিত্তিক শিরোনামঃ
১. স্বাধীকার আন্দোলনের সূচনা।
২. রাজপথে মুক্তির মিশিল।
৩. সংগ্রাম ও আন্দোলন।
৪. একটি পতাকার জন্য/ একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে…
৫. রক্ত ও স্বাধীনতা।
৬. বিজয়।
৭. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
৮. যতদিন রবে পদ্মা,যমুনা,মেঘনা গৌরী বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
৯. সাম্প্রতিক অর্জন।
১০. অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।
১১. ভীষণ ওয়াল।
গ্যালারির স্থিরচিত্রগুলোতে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনেবেশিক শাসন থেকে ভারত ভাগ, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডসহ স্বাধীনতার পরবর্তী ইতিহাস। অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘরে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের অর্জন, চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভিশন-২০২১, ২০৪১ এবং ১০০ বছরের প্রজেক্ট পরিকল্পনা। এছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ চত্বর, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি, গ্রামীণ বাংলার কৃষাণ-কৃষানীর মূর্তি, রয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিলুপ্তির পথে গরুর গাড়ী, পালকি, চা কন্যা ও বিভিন্ন নান্দনিক কৃত্রিম ভাস্কর্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, ইতিহাস, বিকাশে তেঁতুলিয়ায় আগত পর্যটকদের জন্য ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণারে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর স্থাপনা করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে প্রতিবছর প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এসে থাকেন। এই আনন্দের পাশাপাশি যাতে তারা দেশের ইতিহাস, নিজেদের ঐতিহ্য ও দেশের আন্দোলন ও উন্নয়ন, পদ্মাসেতু নির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্প, বিদ্যুতসহ বিভিন্ন ভিশন সম্পর্কে জানতে পারে সে লক্ষেই এই অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর ফটোগ্যালারির মাধ্যমে এসব চিত্র দেখানোর চেষ্টা করেছি। একজন পর্যটক অথবা স্কুল শিক্ষার্থী যদি এই জাদুঘরে আসেন তাহলে তাঁরা অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
চায়ের সবুজে আচ্ছাদিত উত্তরের সর্বশেষ সীমান্ত এলাকা তেঁতুলিয়ায় বছরজুড়েই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। প্রতি বছর শীতের শুরুতে উত্তর আকাশে ভেসে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়। তেঁতুলিয়ার মহানন্দার পাড় থেকে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলে চা-বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, রওশনপুরের আনন্দধারা ঘুরে তৃপ্ত হন পর্যটকরা। অবস্থানগত কারণেই পর্যটকগণ মহানন্দা তীরের ইতিহাসের শিক্ষালয় অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর দেখেও মুগ্ধ হন। চোখ বুলিয়ে নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস।
অবস্থানঃ তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়। …Travel Tips | Accommodation | Tourist Spots
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, বধ্যভূমি ও গণকবর | মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া | পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
তথ্যসূত্রঃ এস কে দোয়েল | সফিকুল আলম
তথ্যচিত্রঃ প্রথম আলো
Last updated: 15 February 2024