শিল্পের বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে Bangladesh Economic Zones Authority (BEZA) পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে Economic Zone বা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দেবীগঞ্জ সদর, দেবীডুবা ও সোনাহার ইউনিয়নের এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হবে।
২০২০ সালের ২৪শে আগস্ট পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের লক্ষ্যে, জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর ও দলিল সম্পাদন করা হয়। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি’র পক্ষে সহকারী ব্যবস্থাপক এ কে এম আনোয়ার ও সরকারের পক্ষে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন দলিলে স্বাক্ষর করেন। BEZA বর্তমানে (২০২৪) দেবীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল-এর সম্ভাব্যতা যাচাই, জমি অধিগ্রহণ এবং আর্থসামাজিক এবং পরিবেশগত সূচক তৈরীর কাজ করছে।
পঞ্চগড় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দেবীগঞ্জ সদর, দেবীডুবা ও সোনাহার ইউনিয়নের ৬০২.৪২ একর জমির ওপর ৩.৩৫ কিমি এলাকাজুড়ে তৈরির প্রস্তাবনা করা হয়। প্রস্তাবিত এই জমির মধ্যে ২১৭ একর খাস জমি, বাকিটা অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়। তবে জমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবিত জমির আয়তন কমিয়ে ২৫০.৮৫ একর করা হয়। যেখানে ২৪০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ১০.৮৫ একর জমিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বেজা’র অনুকূলে ১৮৫.৮৬ একর জমি বন্দোবস্ত করেছে ভূমি দপ্তর। অবশিষ্ট ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৯.৩০ একর ও ভূমিহীনদের নিকট বন্দোবস্তকৃত ৪৫.৬১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাঝে রয়েছে দারার হাট আবাসন প্রকল্পের দুই শতাধিক পরিবার। প্রথমদিকে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাছাকাছি উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তখন এ বিষয়ে আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা ঘোর আপত্তি জানায়। তাঁরা জানায়, যখন আবাসন প্রকল্প স্থাপিত হয় তখন এখানকার জমি অনাবাদি ও অনুর্বর ছিল, জমি ছিল বালুময়। ক্রমান্বয়ে তাঁরা এই জমিগুলোতে জৈব সার, সেচ, চাষাবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন করে কৃষি জমিতে পরিণত করেছেন। তাঁরা কোনোভাবেই অন্যত্র যেতে চান না। শেষ পর্যন্ত আবাসনের পরিবারগুলো পুনর্বাসনের সম্ভাব্য ব্যয়ের আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করে এবং এখানকার বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
জমি অধিগ্রহণ পরবর্তী অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। জনশক্তি, কাঁচামাল ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে সেখানে কী ধরনের শিল্প-কারখানা করলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন, সে বিষয়ে জরিপ করা হবে। তারপর বিনিয়োগকারীদের জন্য প্লট তৈরি করা হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) পরবর্তী অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপিত হলে বদলে যাবে পঞ্চগড়ের অর্থনীতির চিত্র। জীবনমান উন্নয়ন হবে অনেক মানুষের। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০-৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষি নির্ভর পঞ্চগড়ে এগ্রিবেজড অর্থনৈতিক অঞ্চল, তথা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করার প্রস্তাবনা করা হয়। এতে এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের যথাযথ ব্যবহার হবে এবং কৃষকের পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ স্থানান্তরের যে প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কর্মকৌশল ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সরকার ও BEZA ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিযোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের শিল্প ও অর্থনীতি
তথ্যসূত্রঃ Bangladesh Economic Zones Authority (BEZA)
ছবিঃ Daily Star
Last updated: 22 March 2024