কাঞ্চন বাঁশ – Kanchan bamboo

তেঁতুলিয়ার সারিয়াল জোত গ্রামে জন্মায় কাঞ্চন বাঁশ। পঞ্চগড়ে বিভিন্ন জাতের বাঁশ থাকলেও কাঞ্চন নামের প্রজাতির এই বাঁশ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাঁশের তৈরী শৌখিন আসবাপত্র এখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক এবং তেঁতুলিয়ার স্থানীয় ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীদের অন্যতম জীবিকা। তেঁতুলিয়ার সারিয়াল জোত গ্রামের কাঞ্চন বাঁশ-বাগান পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কাঞ্চন বাঁশ ভারতে বোম্বাই বাঁশ নামে পরিচিত হলেও, তেঁতুলিয়া অঞ্চলে কাঞ্চন বাঁশ নামে পরিচিতি লাভ করে। হিমালয়ের অঞ্চলে দৃশ্যমান সুউচ্চ কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের সঙ্গে তুলনা করে বিশাল আকৃতির এই বাঁশের নামকরণ করা হয় কাঞ্চন বাঁশ।

কাঞ্চন বাঁশ এবং বিদেশী টিউলিপ ফুলের চাষের কারণে সারিয়াল জোত গ্রামটির বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সারিয়াল জোত গ্রামে নতুন প্রজাতির কাঞ্চন বাঁশ চাষের কথা ইতোমধ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। কাঞ্চন বাঁশ বাগান পর্যটকদের কাছে দৃষ্টি নন্দন বিষযে পরিনত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সারিয়াল জোত গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত টিউলিপ ফুলের বাগান তেঁতুলিয়ার পর্যটন শিল্পে যোগ করেছে ভিন্নতা। ফলে কাঞ্চন বাঁশ ও টিউলিপ ফুলের বাগান এক নজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক সহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা সারিয়াল জোত গ্রামে ছুটে আসেন।

সারিয়াল জোত গ্রামের জনৈক সরাফত আলী স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ভারতের চাপড়া থানা এলাকা থেকে কাঞ্চন বাঁশের চারা নিয়ে আসেন। সারিয়াল জোত তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিমি দূরে অবস্থিত সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। এর পশ্চিমে ভারতের জলপাইগুড়ির ইসলামপুর ও চাপড়া থানা এবং দক্ষিণে উত্তর দিনাজপুর জেলা। উঁচু বালুময় জমিতে গ্রামটির অবস্থান হওয়ায় এখানে বরাবরই আখ, আনারস ও প্রচুর শাক সবজি চাষাবাদ হতো। সরাফত আলী সারিয়াল জোত গ্রামে তার বাড়িতেই সর্বপ্রথম এই নতুন বাঁশ রোপন করেন এবং পরবর্তীতে তাঁর মাধ্যমেই তেঁতুলিয়া, বোদা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঞ্চন বাঁশ চাষ বিস্তৃতি লাভ করে। সম্প্রতি তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া, চিমনজোত, মাগুড়া, সাহেব জোত, তিরনই হাট, বাংলাবান্ধা সহ পঞ্চগড়ের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের বাড়িতে কাঞ্চন বাঁশের চাষাবাদ হচ্ছে।

কাঞ্চন বাঁশ হলো মূলত একটি কাষ্ঠল চিরহরিৎ উদ্ভিদ, যা ঘাস পরিবারের সদস্য। এটি সাধারণত গুচ্ছে জন্মায় এবং একটি গুচ্ছে ১০ থেকে ৭০ কিংবা ৮০ টি বাঁশ গাছ একত্রে দেখা যায়। দেশীয় বাঁশের তুলনায় কাঞ্চন বাঁশের বৈশিষ্ট্য কিছুটা আলাদা। বাঁশের চারা বের হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বাঁশে পূর্ণতা আসে। বিশাল আকৃতির এই বাঁশ ৭০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা এবং ২৬ থেকে ৩০ ইঞ্চি মোটা হয়, ওজন হয় ৩ থেকে ৫ মণ এবং দেখতে সুপারি গাছের মতই মোটা হয়ে থাকে। কাঞ্চন বাঁশ দ্রুত বর্ধনশীল এবং আসবাবপত্র তৈরির উপযোগী।

কাঞ্চন বাঁশের তৈরিকৃত আসবাব পত্রের দৃঢ়তা, মৃসণতা ও গুণাগুণ তুলনামূলক ভাবে ভাল। কাঞ্চন বাঁশের তৈরি পরিবেশ বান্ধব নানা বাহারী ডিজাইনের পণ্য ঘরের সাজসজ্জাতে ব্যবহৃত হয়। এই বাঁশ দিয়ে গ্রামীণ ঘরবাড়ি, দৈনন্দিন ব্যবহৃত আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন শৌখিন জিনিস যেমনঃ টেবিল, চেয়ার, খাট, দরজা, বেড সাইট টেবিল, ছোট বাচ্ছাদের খেলনা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। কাঞ্চন বাঁশ অগভীর নলকূপ, ঢেঁকি ও পাম্পের পাইপ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

কাঞ্চন বাঁশের চাহিদা, পর্যটন শিল্পের প্রসার ও কারিগরদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও পঞ্চগড়ে কাঞ্চন বাঁশের কোনো বাণিজ্যিক চাষাবাদ নেই। বিপুল সম্ভাবনাময় কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে শৌখিন আসবাবপত্র তৈরির কোনো শিল্প বা কারখানা এ এলাকায় আজ পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে কাঞ্চন বাঁশ শিল্প। পঞ্চগড়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই বাঁশ চাষীদের উৎসাহিত করতে জেলার আয়োজিত কৃষি মেলাগুলোতেও এই জাতের বাঁশ প্রদর্শন করে আসছে। তেঁতুলিয়ার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর সম্পূর্ণভাবে কাঞ্চন বাঁশ ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়েছে।

…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের শিল্প ও অর্থনীতি | পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ


ছবিঃ আবুল হান্নান
Last updated: 6 June 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

কাঞ্চন বাঁশ
সারিয়াল জোত, তেঁতুলিয়া

ম্যাপঃ Google map