পঞ্চগড় সুগার মিলস পঞ্চগড় জেলার সবচেয়ে পুরাতন ও সর্ববৃহৎ শিল্প-প্রতিষ্ঠান। পঞ্চগড় সুগার মিলস প্রতিষ্ঠা হওয়াকে অত্র এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গোড়াপত্তন হিসেবে ধরা হয় এবং পঞ্চগড় সুগার মিলসকে এখানো পঞ্চগড়ের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচ্য। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১৪ লক্ষ টাকা মুনাফা পরবর্তী সময় হতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে লোকসানের কারণে পঞ্চগড় সুগার মিলস-এ আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে স্থগিত রয়েছে।
- নামঃ পঞ্চগড় সুগার মিলস লিঃ
- প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৬৫-৬৯ সাল
- উৎপাদন শুরুঃ ১৯৬৯-৭০ সাল
- মালিকানাঃ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন
- আয়তনঃ ১৯৮.৪৬ একর
- শ্রমিক সংখ্যাঃ ৮১৩ জন স্থায়ী ও সাময়িক কর্মকর্তা-কর্মচারী (উৎপাদন কালীন সময়ে), ২০২০ সাল বন্ধ ঘোষণার সময় চিনিকলে স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী ছিলেন ৩৩২ জন। বর্তমানে (২০২৩) আছেন ৯৭ জন।
- উৎপাদিত পণ্য সমূহঃ প্রধানত চিনি, পরবর্তীতে বাই প্রোডাক্ট (চিটাগুড়, ব্যাগাস/ছোবড়া ও প্রেসমাড)
- উৎপাদন ক্ষমতাঃ আখ মাড়াই দৈনিক ১৫০০ মেঃ টন এবং বার্ষিক উৎপাদনের ১৫,০০০ মেঃ টন
- গড় উৎপাদনঃ স্বাধীনতার ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৮ হাজার ৫’শ ৩৬ মেট্রিক টন চিনি
- বর্তমান অবস্থাঃ ২০২০ সাল হতে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত
১৯৬৫-৬৯ সালের সরকারের সময়ে দেশের সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকায় ৫৫.৫৫ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে ১৯৮.৪৬ একর জমির উপর স্থাপন করা হয় পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেড। ১৯৬৯ সাল থেকে পরীক্ষামূলক আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু হয়। এই বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সারকারখানা এবং অফিস ও আবাসন ভাবনের সমন্বয়ে গঠিত। স্থায়ী ও সাময়িক ৮১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে শুরু হয় পঞ্চগড় সুগার মিলস।
পঞ্চগড় সুগার মিলের দৈনিক আখ মাড়াই করার ক্ষমতা ১,৫০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক উৎপাদনের ক্ষমতা ১৫,০০০ মেট্রিক টন। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ৮ হাজার ৫’শ ৩৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছে। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬’শ ১২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল। ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ প্রধানত চিনি উৎপাদন করা হয়ে থাকলেও, পরবর্তীতে এখানে বাই প্রোডাক্ট (চিটাগুড়, ব্যাগাস/ছোবড়া ও প্রেসমাড) উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
পুরাতন মেশিন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, যান্ত্রিক ত্রুটি ও বিপুল পরিমান চিনি অবিক্রিত থাকাসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে পঞ্চগড়ের এই বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আজ মৃতপ্রায়। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের পর থেকে ব্যয় বেড়ে যাওয়া, আখের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে লোকসান গুনতে শুরু করে কারখানাটি। প্রতি বছর প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসানের কারণে ২০২০ সালে দেশের ছয়টি চিনি কারখানার সঙ্গে পঞ্চগড়েও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে সরকার, এতে পঞ্চগড় সুগার মিলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে।
পঞ্চগড় সুগার মিলস আধুনিকায়নের উদ্যোগ হিসাবে ২০১৮ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক ইটিপি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পঞ্চগড় চিনিকলে ইটিপি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পঞ্চগড় সুগার মিলে আখ মাড়াই বন্ধের কারনে ২০২৩ সালে পঞ্চগড়ের আখ পার্শবর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার সুগার মিলে নেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ মিল মালিকানাধীন চাষযোগ্য জমিতে আখ এবং অন্যান্য পণ্য আবাদের উদ্যোগ নেয়।
২০২৩ সালের তথ্যানুসারে পঞ্চগড় সুগার মিলে কোনো চিনি মজুত না থাকলেও ৪৮৯ মেট্রিক টন চিটাগুড় অবিক্রীত অবস্থায় মজুদ ছিল। চিনিকলটির পঞ্চগড় সোনালী ব্যাংক শাখায় ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪৩ কোটি টাকা। তা ছাড়া পঞ্চগড় সুগার মিলের নামে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের করা ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে প্রতিবছর ১৮-২০ কোটি টাকা সুদ দেনা হচ্ছিলো। চিনিকলের ২৬০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীর ৯ কোটি ২৪ লাখ গ্রাচ্যুইটির টাকা ছিল বকেয়া। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এর মতে পঞ্চগড় সুগার মিলের কারখানার অবস্থা অনেক ভালো থাকার কারণে ভবিষ্যতে পঞ্চগড় সুগার মিলস আবার চালু হবার সুযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পঞ্চগড় সুগার মিলের স্বল্প পরিমাণে সরকারী খাতে রাজস্ব জমার হিসাবঃ
অর্থ বছর | আয় (লক্ষ টাকা) |
২০০৮-০৯ | ১০৮.২৭ |
২০০৯-১০ | ৯৮.০৫ |
২০১০-১১ | ১০৮.১৪ |
২০১১-১২ | ৬২.৫৪ |
২০১২-১৩ | ৭৬.৯৮ |
২০১৩-১৪ | ৮৭.৭৪ |
২০১৪-১৫ | ৯১.১৭ |
২০১৫-১৬ | ১২২.২৯ |
২০১৬-১৭ | ১৪৪.৮ |
২০১৭-১৮ | ১৪৩.০২ |
মোট | ১,০৪৩.০০ |
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাই প্রোডাক্ট উৎপাদনের পরিমাণঃ
অর্থ বছর | চিটাগুড় | ছোবড়া | প্রেসমাড | ||||||
উৎপাদন (মে.টন) | বিক্রি (মে.টন) | আয় (লক্ষ টাকা) | উৎপাদন (মে.টন) | বিক্রি (মে.টন) | আয় (লক্ষ টাকা) | উৎপাদন (মে.টন) | বিক্রি (মে.টন) | আয় (লক্ষ টাকা) | |
২০০৮-০৯ | ২,২৪৮ | ২,৯৯৫.১৫ | ২৪১.১৮ | ২৫,৮০৩.২৭ | ৪,২৩২ | ১০.৭৫ | ২,১৭৯.১৮ | – | – |
২০০৯-১০ | ১,৮৭৮ | ৫৮০.৮৪ | ১০৭.৬৩ | ২৪,২০১.১৩ | ৪,১৪০ | ১০.৫৪ | ২,০২০.৫৪ | ২০৮.৩৩ | .২৫ |
২০১০-১১ | ২,৪৮১.৪২ | ২,৩৪৩.৭১ | ২৭৭.০২ | ৩৫,৩০৫.৮২ | ৩,৭৭৭.২৮ | ২২.৯৪ | ৩,০১৬.৫১ | ১,০৫০ | ১.২৬ |
২০১১-১২ | ১,৯৯৬.৪৬ | ১,০৯৫.৮১ | ৮৭.৮৭ | ২৭,৭৮৫.৮৮ | ৩,০৩১.৫৮ | ১৬.২৬ | ২,৩৯৮.৮২ | ৯০৮.৩৩ | ১.০৯ |
২০১২-১৩ | ১,৮৬০.১৫ | ২,৩০০.৫০ | ১২৩.৭৩ | ২৬,৪১৪.৯৮ | ১,৪২৫.১৮ | ১৯.৬৫ | ২,১৯২.৯৬ | ২০৮.৩৩ | .২৫ |
২০১৩-১৪ | ৩,১০৩.৮৬ | ৪,০০৫.৭০ | ২৩৪.১৮ | ৩৫,৩৩৯.৩১ | ১,৭০৫.০৫ | ২৫.১২ | ২,৯৬১.৫৫ | ৫০০ | .৬ |
২০১৪-১৫ | ১,৯৬০.০১ | ১,৫০০ | ৯৯.৩৪ | ২২,৯১৫.২০ | ২,৮৩৪.০৪ | ২২.৬৮ | ১,৮৯৫.৮৪ | ৮৬৬.৬৬ | ১.০৪ |
২০১৫-১৬ | ১,৪৬৫ | ২,০০২.৫৮ | ১৯৬.৯৭ | ১৮,২৮৮.২৯ | ১,২৭২.৪১ | ৭.০২ | ১,৫১০.২২ | ৭১৬.৬৬ | .৮৬ |
২০১৬-১৭ | ২,০৩০ | ১,৬৪৯.৫০ | ২৩৮.৪৩ | ২৩,৪৪৮.৯৯ | ১,১৩৬.৩২ | .১২ | ১,৯৫৩.৫৫ | ৩৯১.৬৬ | .৪৭ |
২০১৭-১৮ | ২,১১৫.২৫ | ১,৮৫০.৫১ | ২৪০ | ২৫,৬৮২.৬২ | ১,০১৫.৬৮ | ৫.৪৭ | ২,১৩৩.৩৩ | ৫৩৩.৩৩ | .৬৪ |
মোট | ২১,১৩৮.১৫ | ২০,৩২৪.২৯ | ১,৮৪৬.৩৫ | ২৬৫,১৮৫.৪৯ | ২৪,৫৬৯.৫৪ | ১৪০.৫৫ | ২২,২৬২.৫০ | ৫,৩৮৩.৩০ | ৬.৪৬ |
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের শিল্প ও অর্থনীতি | পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ
তথ্যসূত্রঃ bsfic.gov.bd | লুৎফর রহমান | সোহাগ হায়দার | রাজিউর রহমান
Last updated: 28 September 2024