মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার অফিসের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক। পঞ্চগড় জেলার ৫৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম এই ফলকে খোদাই করে লেখা রয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে তোপধ্বনি দেওয়া হয়, শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় জাতির বীর সন্তানদের। স্মৃতিফলকের পূর্ব পাশে একটি স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে আগত শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-পরিচয় জানতে পারে। …আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তবে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় স্বাধীন হয় ১৭ দিন আগে অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পঞ্চগড় জেলায় শহীদ হন ৫৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের অফিসের ঠিক সামনে নির্মাণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক। উপজেলাভিত্তিক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা এই ফলকে খোদাই করে লেখা রয়েছে।
অবস্থানঃ পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সদর দফতরের বিপরীতে।। …Travel Tips | Accommodation | Tourist Spots
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণার পরই পঞ্চগড় জেলার ছাত্র, জনতা, কৃষক-শ্রমিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, আনসার, কৃষক-শ্রমিক, রাজনৈতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পাক হানাদার বাহিনী সারাদেশে আক্রমণ শুরু করলেও ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত পঞ্চগড় পাক হানাদারমুক্ত ছিল। পাক হানাদার বাহিনী সড়কপথে ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় পঞ্চগড় দখল করে নেয়,পঞ্চগড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাধ্যমতো যুদ্ধ করে অনেকে শহীদ হন। আহত হন অনেকে। স্বাধীনতার জন্য পাগলপ্রায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সমানতালে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে যান। পাক হানাদার বাহিনী পঞ্চগড় দখলের পর স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। একাত্তরের জুলাই মাসের প্রথমদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত গেরিলা যুদ্ধের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাঁদের অব্যাহত গেরিলা আক্রমণের তীব্রতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা।
১ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকবাহিনীর ডিফেন্সের উপর হামলা চালায়। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা মুক্ত হতে থাকে। মরণ কামড় হিসেবে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী পর্যায়ক্রমে পাকবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমণ চালিয়ে ২০ নভেম্বর অমরখানা, ২৫ নভেম্বর জগদলহাট, ২৬ নভেম্বর শিংপাড়া, ২৭ নভেম্বর পূর্ব তালমাসহ একই দিনে আটোয়ারী, মির্জাপুর, ধামোর, শক্রমুক্ত করে রাতেই তাঁরা পঞ্চগড় সিও অফিস ও ঘাটিয়ারপাড়া এলাকায় ফ্রন্টলাইন গড়ে তোলেন। ২৮ নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীর উপর ঝড়ো আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে পঞ্চগড় শহরের পূর্বদিকে ডিফেন্স নিয়ে থাকা পাক হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে টুনিরহাট দেবীগঞ্জ ভায়া ডোমার হয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে সৈয়দপুর অভিমুখে পিছু হটতে থাকে। ওইদিন রাতে মুক্তি, মিত্র, ট্যাংক ও পদাতিক বাহিনীর সম্মিলিত সাঁড়াশি আক্রমণে পরাজিত হয়ে পাক হানাদার বাহিনী পঞ্চগড়ের মাটি ছেড়ে চলে গেলে ২৯ নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় হানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকে শহীদ হলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা প্রশাসনের হিসেবে বর্তমান পঞ্চগড় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলার ১৩ জন, সদর উপজেলার ২০ জন, বোদা উপজেলার ১১ জন, আটোয়ারী উপজেলার ৬ জন এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ৪ জন।
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, বধ্যভূমি ও গণকবর | মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া | পঞ্চগড়ের তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা | পঞ্চগড়ের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা
তথ্যসূত্রঃ মো. আব্দুল কাইউম
Last updated: 6 April 2024