শালবাহান তেল খনি – Shalbahan Oil Mine

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেলের খনির অবস্থান উত্তরাঞ্চলের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান গ্রামে। ১৯৮৬-৮৭ সালে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে বাংলাদেশ সেল এবং সিঙ্গাপুর ও কোরিয়ার যৌথ অনুসন্ধান ও সমীক্ষার পর বাংলাদেশ খনিজ মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নের শালবাহান নামক স্থানে মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল (জ্বালানি কেরোসিন তেল) মজুদ রয়েছে। যা তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রথম তেল খনিজ মজুদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।

তেলের খনি আবিষ্কারের পরপরই পঞ্চগড় তথা দেশবাসীর মাঝে দেখা দেয় ব্যাপক আনন্দ, উৎসাহ আর উদ্দীপনা। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীকে শালবাহান তেল কূপের তেল ও গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অধীনে অনুসন্ধান চালানো হলে শালবাহানের এলাকায় মাত্র ৫ হাজার পয়েন্ট গভীরে এ খনির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।

পরবর্তীতে ফরাসি কোম্পানি ফরাসল টানা দুই বছর অনুসন্ধান শেষে নিশ্চিত হয় তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৯০০ মিটার গভীরে রয়েছে উত্তোলনযোগ্য জ্বালানি তেল। ১৯৮৮ সালে খনির মধ্যবিন্দু শালবাহান এলাকায় কূপ খননের জন্য বাংলাদেশ সেল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি এবং ফরাসি ফরাসল কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হয়। উত্তোলনের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৮৮-৮৯ সালের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উক্ত প্রকল্পে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকার শালবাহান তেল খনি এলাকায় ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশী কোম্পানির বিশাল যান্ত্রিক গাড়ির বহর প্রবেশ করে শালবাহানে। তারা পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ তেল উত্তোলনের জন্য ব্যাপক খনন কাজ শুরু করে ৯৯ ভাগ নিশ্চিত হয় যে, শালবাহান তেল খনিতে প্রচুর তেল ও গ্যাস মজুদ আছে। পরবর্তীতে তারা শালবাহানে ৮ হাজার ফুট গভীরে ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি তেল কূপ খনন করে। তেল প্রাপ্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত হলে রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৮ সালের ১০ এপ্রিল নিজেই উপস্থিত হয়ে শালবাহান তেল খনির উদ্বোধন করেন এবং অবিলম্বে তেল খনি থেকে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেন।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই ভারতীয় একটি হেলিকপ্টার এসে খনি এলাকায় তিনবার ঘুরে চলে যায়। এর পরপরই হঠাৎ করে ফরাসল কোম্পানি এই এলাকায় তেল নেই বলে ঘোষণা জারি করে। যার সূত্র ধরে তারা টানা তিনদিন খনির মূল পয়েন্টে সিমেন্ট এবং সিসা ঢেলে তেল ও কুপের মুখটি সিলগালা করে দেয়। ফলশ্রুতিতে শালবাহান কুপ খনন ও তেলের অনুসন্ধান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফরাসল কোম্পানি তাদের মালামাল ও সরঞ্জামাদি গুটিয়ে নেন এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকারি পাহারায় তাদের সকল কর্মচারীগণ শালবাহান তেল খনি এলাকা ত্যাগ করে।

শালবাহান কূপটি কেন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সেই বছরে ২৭ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয় (১) কেউ মনে করেন রাজনৈতিক চাপে (২) ভারতের কারণেই শালবাহান কূপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। কূপটি বন্ধের ব্যাপারে পেট্রোবাংলার ভাষ্য ছিল- এখান থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন অলাভজনক হওয়ায় বৈদেশিক কোম্পানিগুলো শালবাহান তেল খনিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, এর পরবর্তীতে উক্ত ফরাসল কোম্পানি বাংলাদেশের শালবাহান থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার জমিদার পাড়া গ্রামে তেল কূপ খনন করেছে। ওই তেল কূপ দিয়েই ভারত সরকার মাটির নিচ দিয়ে বাংলাদেশের তেল শোষণ করছে এবং বাংলাদেশ সরকার শালবাহান খনিতে সত্যিই তেল আছ কি না এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের শিল্প ও অর্থনীতি | পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ


ছবিঃ রুবেল আহমেদ জয়
Last updated: 27 June 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

শালবাহান তেল খনি
তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়