বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সেবা চালু – Banglabandha land port starts immigration service

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সেবা চালু হয়। বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট উদ্বোধনের মাধ্যমে পঞ্চগড়বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন, পর্যটনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় বিকাশ ও ভারত-বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালুর খবর পেয়ে ঐতিহাসিক এই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজার হাজার মানুষ স্থলবন্দর এলাকায় ভিড় করে। দুপুর হওয়ার আগেই জিরো পয়েন্ট এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা হবার ১৮ বছর অপেক্ষার পর বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু হবার এই মুহূর্তটি পঞ্চগড়ের জন্য ছিল খুবই আনন্দের। দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চালুর বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ফলক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব) ড. বিজয় কুমার সিংহ।

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব) ড. বিজয় কুমার সিংহ, সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব ফরহাদ হাকিম, নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার ইনচার্জ গৌতম দেব, দার্জিলিংয়ের এমপি ওয়ালিউল্লাহ।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বে ছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন সংসদ সদস্য (পরবর্তীতে রেলমন্ত্রী) নুরুল ইসলাম সুজন, বিজিবির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ আজিজ, সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, পঞ্চগড় জেলা আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পঞ্চগড় চেম্বারের পরিচালক মেহেদি হাসান খান বাবলা, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট-সহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদগণ।

দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল হেলিকপ্টার যোগে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নে এসে অবতরণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পঞ্চগড় সদর হতে সড়ক পথে বাংলাবান্ধা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে বিকেল ৩টার পর ভারতীয় প্রতিনিধি দল ভারতের ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাঁদের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নিয়ে আসা হয়। ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোয়াজ্জেম আলী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ডেপুটি হাইকমিশনার অভিজিত চট্রোপাধ্যায়।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে পঞ্চগড় প্রেসক্লাব সভাপতি এ রহমান মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক সফিকুল আলম সফিক-এর নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের একটি দল বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেন। দলটি ভারতে প্রবেশ করলে তাঁদের ফুল ও উপহার সামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫ সাংবাদিক। তবে ভারতের তরফ থেকে উদ্বোধনের দিনে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে ভারত থেকে বাংলাদেশে কেউ প্রবেশ করেননি।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ১৪ বছরের মাথায় ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দর কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর থেকেই এই বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে স্বল্প পরিসরে বাণিজ্য কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারির উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য ব্যাপকভাবে আমদানি-রফতানীর সুযোগসহ পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরকে ইমিগ্রেশনসহ একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। ৩ মাসের সেই প্রতিশ্রুতির ৭০ মাস পর অবশেষে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সেবা চালু হলো।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সকলের বক্তব্যেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি থেকে উঠে এসেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা। দুই দেশের বর্হিবাণিজ্য ও পযর্টনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, এই চেকপোস্ট থেকে শিলিগুড়ি শহর ১৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। রাজ্য তো বটেই দেশের অন্য কোনও সীমান্তের চেকপোস্টের এত কাছে এমন বড় শহর নেই। এই পথে শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা ৮-৯ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনো যাবে। তেমনই, বাংলাদেশের বাসিন্দারা ৫ ঘণ্টারও কম সময়ে দার্জিলিং পৌঁছাতে পারবেন।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইমিগ্রেশন সেবা উদ্বোধনের পরবর্তী দু’বছর প্রাণচাঞ্চল্য ছিল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী দিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা নিয়মিত যাতায়াত করতো। কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ৩০ মার্চ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে টুরিস্ট ভিসায় আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল ভ্রমণ ভিসায় ভারত যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (নভেম্বর ২০২৩) বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে অজ্ঞাত কারণে ভ্রমণ ভিসা দেয়া হচ্ছে না।

 


ছবিঃ তানিম আহমেদ
Last updated: 17 January 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

Place: বাংলাবান্ধা, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।

Date: 2018-02-18