বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উদ্বোধন – Inauguration of Banglabandha land port

২০১১ সালের ২২ জানুয়ারী (শনিবার) উৎসব মুখর পরিবেশে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় নেপাল এবং ভুটানের সাথে ভারতের ভেতর দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে ভারতের সম্মতির পরই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালু হলো। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সহজিকরণ ও সম্প্রসারণ এবং ভবিষ্যতে এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর-এর কার্যক্রম শুরু হলো।

ভারতের পক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরবাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয় বাংলাবান্ধার বিপরীতে ভারতের ফুলবাড়ি স্থলবন্দরে। উদ্বোধন উপলক্ষে দুইদেশের সীমান্তেই ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। রঙিন পতাকা দিয়ে সাজানো হয় বাংলাবান্ধা ফুলবাড়ি সড়ক।

বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের ফলক উম্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

২২ জানুয়ারী ১টা ১০ মিনিটে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের ফলক উম্মোচন করেন। এরপর তিনি বাংলাবান্ধা জিরো লাইনে ফিতা কেটে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারতের ফুলবাড়িতে মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজহারুল হক প্রধান, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফরিদা আখতার হীরা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য হোসাইন আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জসিমউদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক, পুলিশ সুপার মো. শাহারিয়ার রহমান, পঞ্চগড়ের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ইকবাল হাসান মিন্টু ও সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজাউল করিম। পঞ্চগড়ের সাংসদ মজহারুল হক প্রধান ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর জন্য ১টি সোনার নৌকা, ১ মণ ইলিশ, ১০ কেজি বিশেষ মিষ্টি, ১০ কেজি তুলশী চা, ১০ কেজি গ্রীণ চা উপহার হিসেবে নিয়ে যান।

স্থলবন্দরের উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান ভারতের ফুলবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে নগর উন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুর্খাজী ও বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন।

প্রণব মুর্খাজী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা চলতে পারে না। এই বৈষম্য দূর করতে আমরা দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করছি। বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের চেয়ে ফুলবাড়ি- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর অনেক সম্ভাবনাময়। কারণ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও নেপাল ভুটানের গেটওয়ে ফুলবাড়ির কাছেই শিলিগুড়ি। শিগগিরই এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভারত- বাংলাদেশের সর্ম্পক ঐতিহাসিক। বন্ধুপ্রতিম দুইদেশের পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এই বন্দর চালুর ফলে দু দেশের কলকারখানা গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হল। এই বন্দর চালুর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা ট্রানজিট চালু হয়। আবার মহাজোট সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হল। আশা করছি শিগগিরই এই বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। পশ্চিম বঙ্গের নগর উন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের জন্য ১০ কোটি রুপির প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮ কোটি রুপি খরচ করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য পথ উম্মুক্ত করতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করে ইমিগ্রেশন চালু করার আশ্বাস দেন। তিনি ঢাকা-বাগডোগরা বিমান চালুর ওপর গুরত্বারোপ করেন।

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারত থেকে ৩টি ট্রাকে ৩০ টন ব্যালেস্ট পাথর আসে এবং বাংলাদেশ থেকে ২ টি ট্রাকে ৯ টন গার্মেন্ট ঝুট ভারতে যায়। ৩ টা ১০ মিনিটে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠান শেষে ফিরে এসে বাংলাবান্ধায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালুর ফলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে পঞ্চগড়সহ গোটা উত্তরাঞ্চলের, দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

উল্লেখ্য যে, পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেসন কার্যক্রম শুরু করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড. বিজয় কুমার সিং যৌথভাবে এই ইমিগ্রেসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

 


তথ্যসূত্রঃ সোহাগ হায়দার | মোঃ শাহজালাল
ছবিঃ সোহাগ হায়দার | মোঃ শাহজালাল
Last updated: 5 February 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

Place: বাংলাবান্ধা, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।

Date: 2011-01-22