২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) বোদা উপজেলায় অবস্থিত করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদের মধ্যে প্রায় সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তারা নদীর অপরপাড়ে অবস্থিত বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভা যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
ঘটনার পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত ৬৯ মরদেহের মধ্যে বোদা উপজেলার ৪৬, দেবীগঞ্জ উপজেলার ১৭, আটোয়ারী উপজেলার দুই, পঞ্চগড় সদরের এক এবং ঠাকুরগাঁও সদরের ৩ জন। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৮, নারী ৩০ এবং শিশু ২১ জন। এছাড়া ৩ জন নিখোঁজ থাকে যাদের সন্ধান তখন পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ৯ এবং ১১ ই নভেম্বর নিখোঁজ তিনটি মৃতদেহের মধ্যে ২টি মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় এবং যাতে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা হয় ৭১। এই দুইটি মৃতদেহ ছিল ভূপেন এবং শিশু জয়া রানীর (৪)। নৌকাডুবিতে এখনো (অক্টোবর, ২০২৩) বোদা উপজেলার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়া এলাকার সুরেন্দ্রনাথ (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ নিখোঁজ রয়েছেন।
২৫ সেপ্টেম্বর, রবিবার করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে এক বিশাল ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। ধর্মসভায় যোগ দিতে পঞ্চগড় জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন শ্যালো মেশিনচালিতে একটি নৌকাযোগে মন্দিরে তীর্থযাত্রা করছিলেন। দুপুরের দিকে নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। ৫০ জন ধারণক্ষমতার নৌকাটিতে ১৫০ জনেরও বেশী যাত্রী ছিল। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অধিকাংশ নিখোঁজ হয়। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দলও ৯ দিন ধরে উদ্ধারকাজ চালায়।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- ঘাটের ইজারাদারের গাফিলতি, নৌকার মাঝির অদক্ষতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে ভেবে যাত্রীদের নিষেধ না করা এবং যাত্রীদের অসচেতনতা। পাশাপাশি ভৌগোলিক পরিস্থিতি ও নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবন-জীবিকার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পাঁচ দফা সুপাারিশ করে কমিটি।
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের অন্যান্য ঘটনা প্রবাহ
Last updated: 14 October 2023