তেঁতুলিয়া শিব মন্দির – Tetulia Shiva Temple

তেঁতুলিয়া শিব মন্দির
তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।

ম্যাপঃ Google map

উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের তেঁতুলিয়া ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটি মহকুমা শহর। এখানে বসবাস করতেন একাধিক বনেদি হিন্দু পরিবার। এই প্রেক্ষাপটে এখানে নির্মিত অন্তত চারটি মন্দির এখনো প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। রাজা শালিবাহন, রাজা পৃথু এবং রাজা জল্লেশ পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ও জেলার ভেতরগড় এলাকায় রাজ্য ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন। সে সময়ের কয়েকটি মন্দির পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সদরের পুরাতন বাজার এলাকাজুড়ে রয়েছে।

তেঁতুলিয়া শিব মন্দিরের মিনার

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের পেছনে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় মন্দির। এটি তেঁতুলিয়া শিব মন্দির নামেই অধিক পরিচিত। এই একরত্ন শিব মন্দিরটি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে রায় সাহেব নীলমণি দাস (শুরি) নির্মাণ করেন। শিব মন্দিরটি প্রায় ২০ ফুট বর্গাকৃতি হয়ে উঠার পর ক্রমহ্রাসমান তীক্ষ্ণ শিখরে পরিণত হয়েছে। এই মন্দিরের মোট উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। মন্দিরের গর্ভ গৃহের সঙ্গে চারিদিকে রয়েছে বর্ধিত বিল্ডিং বা প্রদক্ষিণ পথ। মন্দিরের রয়েছে খাজ যুক্ত ক্ষুদ্র কার্নিশ। উপরের চোখা অংশের মাঝখানে একটি অন্তঃপ্রবিষ্ট প্যানেলে রয়েছে পোড়ামাটির নৃত্যরত শিবমূর্তি।

মহানন্দা নদী তীরে প্রায় লোকালয় বর্জিত জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে রয়েছে অপরূপ স্থাপনা নিদর্শন বিশিষ্ট আরও একটি একরত্ন শিব মন্দির। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খুব কাছাকাছি স্থানে মন্দিরটির অবস্থান। এই মন্দিরটি প্রায় ১৫০ বছর পূর্বে বিশিষ্ট জোতদার টেংকুসাহা কর্তৃক নির্মিত হলেও বর্তমানে এটি তাঁর নাতি হরেন বাবুর মন্দির নামে অধিক পরিচিত। এটিও উপরোক্ত মন্দিরের অনুরূপ নিচের দিকে বর্গাকার এবং উপরের অংশ চোখা। এই মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এই মন্দিরের দক্ষিণ দিকের গর্ভগৃহের সঙ্গে রয়েছে আরেকটি বর্ধিত কক্ষ। মন্দিরটিতে রয়েছে ভাঁজযুক্ত তিন স্তর বিশিষ্ট কার্নিশ। শীর্ষ গোলাকার-ই বলয় আকৃতির ব্যান্ড দিয়ে শোভিত।

ঐতিহাসিক শিব মন্দিরের রয়েছে মোট পাঁচটি প্রবেশ পথ। এর দরজাগুলি খিলান ও নকশা যুক্ত। ভেতরের দেয়ালে রয়েছে বেশ কয়েকটি খুপরি। বাইরের শীর্ষ অবয়বের মাঝামাঝি দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি নারী মূর্তি আর দুদিকে রয়েছে দুটি ফণা যুক্ত সাপ। পোড়ামাটির নারী মূর্তিটি সম্ভবত দেবী মনসার। ফণা যুক্ত সাপের ডান দিকে ময়ূর এবং বাম দিকে গরুর চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। মন্দিরের মূল গৃহের দক্ষিণ বা মূল প্রবেশ পথের বাইরের দেয়ালে দুটি নৃত্যরত হনুমানের চিত্র রয়েছে। গৃহ গর্ভে অতীতে শিবলিঙ্গ স্থাপিত ছিল। বর্তমানে শুধু পরে রয়েছে শূন্য বেদী।

তেঁতুলিয়া হরেন বাবুর মন্দির

তেঁতুলিয়া পুরাতন বাজারে যাওয়ার পথে বা পাশে রয়েছে একটি দালান আকৃতির মন্দির। গর্ভগৃহে মসজিদের মিম্বরের মত রয়েছে একটি বিশেষ বেদী। এই বেদীকে কেন্দ্র করে টানেলের মত রয়েছে প্রদক্ষিণ পথ। মন্দিরের গৃহটি সাধারণ আবাসস্থলের মত কোম্পানি আমলে নির্মিত।

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে এ এলাকায় জনবসতি কম ছিল কিন্তু সনাতন ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাসহ অন্য পূজাও ধুমধাম করে পালন করা হতো। আর সেই উৎসবে ঢাকের তালে তালে আনন্দে মেতে উঠতো স্থানীয়রা। সুসজ্জিত প্রতিমাগুলো মন্দিরে শোভা পেতো। তাছারা সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় ধর্মীয় লোকেরা সেখানে গিয়ে পূজা দিতে সংকোচ বোধ করেন। বর্তমানে (২০১৫) মন্দিরটি পরিত্যক্ত ভবন হিসেবে পড়ে রয়েছে। উনিশ শতকের শিব মন্দিরটি আজ ধ্বংসের মুখে, অবহেলার কারণে মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

এই মন্দিরের কিছুদূর পূর্ব প্রান্তে দালান আকৃতির পাশাপাশি দুটি খুদে মন্দির দেখা যায়। সম্ভবত এই দুটি মারওয়ারীদের পারিবারিক দেব-দেউল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তেঁতুলিয়া শহরে নির্মিত শিবমন্দির গুলোর অবয়রিক গঠনশৈলী জলপাইগুড়ি শহরে নির্মিত মন্দিরের অনুরূপ।

অবস্থানঃ তেঁতুলিয়া সদরের পুরাতন বাজার সংলগ্ন মহানন্দা নদীর তীরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায়, উপজেলা শহরের চৌরাস্তার মোড় হতে পশ্চিম দিকে এই মন্দিরগুলি অবস্থিত।

…আরো পড়ুন পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ


তথ্যসূত্রঃ পঞ্চগড় : ইতিহাস ও লোকসাহিত্য | ড. নাজমুল হোক
ছবিঃ Historical Monument of Bangladesh
Last updated: 16 May 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn