দয়াল চন্দ্র বর্মন – Dayal Chandra Barman

অনর্গল ইংরেজি বলা দয়াল চন্দ্র বর্মণ একজন সোস্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি, মোটিভেশনাল স্পিকার। শিক্ষামূলক কনটেন্ট মেকার হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পরিচিতি। পঞ্চগড়ের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের মাঝে অধ্যাবসায় আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আকাশ ছোঁয়ার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত দয়াল চন্দ্র বর্মন। সর্বদা Self development (আত্ন উন্নয়নমূলক) নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী দয়াল সবার চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছেন সীমাবদ্ধতা আর ভীতি জয়ের নায়ক হিসেবে। দয়াল একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষের থেকেও অনেক পরিস্কারভাবে ইংরেজীতে অনরর্গল কথা বলতে পারেন। বর্তমান সময়ের যুব সমাজের মাঝে দয়াল চন্দ্র বর্মণ একজন অনুসরণীয় সোস্যাল মিডিয়া আইকন।

দয়াল চন্দ্র বর্মন শিক্ষাজীবনে একজন ড্রপ আউট স্টুডেন্ট বা ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ছিলেন। নামীদামি স্কুল বা কলেজে থেকে কখনও পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেই কোনো প্রশিক্ষণও। তারপরও ইংরেজিতে কথা বলে রাতারাতি তারকা বনে যান দয়াল, পরিচিত হয়ে উঠেন ইংরেজি বক্তা হিসেবে। ফেসবুক আর ইউটিউবের কল্যাণে পঞ্চগড়ের অজপাড়াগাঁয়ের এই তরুণ এখন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে। গ্রামের ক্ষেত-খামারই তাঁর ষ্টুডিও। দয়ালের জীবনের গল্পগুলোই তাঁর কন্টেন্ট। দয়াল তার দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজের বিবরণ যেমনঃ কৃষিকাজ, বাড়ির কাজ, ঘোরাফেরা, মোটিভেশন প্রভৃতি ইংরেজীতে ভিডিও তৈরী করে ফেসবুক ও ইউটিউবে পোস্ট করে তার সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।

দয়ালের জন্ম পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীদ্বার গ্রামে। তাঁর বাবার নাম পুলিন চন্দ্র বর্মন পেশায় কৃষক, মা কুসলা রানী একজন গৃহিনী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান দয়াল পড়ালেখা শুরু করেন পঞ্চগড়ের প্রামাণিক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক মোঃ আজগর আলীর ইংরেজি পড়ানোটা তাঁর ভালো লাগত। সেই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই চলত ইংরেজির চর্চা। পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়া কালে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষক জনাব হারুন স্যার নির্দেশনায় একাগ্রচিত্তে ইংরেজি ব্যাকরণ পাঠ করেন। বন্ধুরা যখন প্রাইভেট পড়ায় ব্যস্ত, দয়াল তখন ব্যস্ত ছিলেন ইংরেজির ভিতটাকে আরও মজবুত করার কাজে। এই সময়কালে দয়াল ইংরেজিতে শূন্যস্থান পূরণ, লিখা সহ প্রচুর অনুশীলন করেছেন।

২০১৭ সালে এসএসসি পাশ করলে তাঁর বাবা পুলিন চন্দ্র বর্মন জমি বন্ধক রেখে দয়ালকে একটি ল্যাপটপ কিনে দেন। সেই ল্যাপটপে অনুপ্রেরণাদায়ী ও শিক্ষণীয় ভিডিও দেখতে শুরু করেন দয়াল। নতুন উদ্যোমে শুরু করেন কলেজ জীবন, ভর্তি হন রংপুরের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। মাধ্যমিক পেরোনোর পর দয়ালের শিক্ষাজীবন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। দয়ালের স্বজনদের অনেকেই থাকতো ভারতে। পরিবার চাইছিল, দয়াল যেন ভারতে গিয়ে উচ্চ-শিক্ষা নেন। কিন্তু দয়ালের দেশে থেকেই একটা কিছু করার ইচ্ছা ছিল। এই সময়কালে পারিবারিকভাবে ভারতে যাবার তাগিদ এবং নিজের ইচ্ছা – এই দোটানায় পরে কলেজ জীবনে মনোনিবেশ করতে পারেননি দয়াল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি না থাকায়, কলেজ থেকে নিজেকে ড্রপ আউট করেন তিনি। ফিরে আসেন আটোয়ারীর নিজ গ্রামে, বাবা-মায়ের কাছে। এরপর কিছুদিন পড়াশুনা থেকে দুরে থাকলেও ২০২০ সালে ভর্তি হন ঠাকুরগাঁও ইকো কলেজ-এ।

মূলত আটোয়ারীতে ফিরেই দয়াল স্থির করেন তাঁর লক্ষ্য। ইংরেজি ভাষাশিক্ষায় নিজেকে পারদর্শী করতে সম্পূর্ণভাবে শপে দেন নিজেকে। YouTube-এর বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়ে একপর্যায়ে নিজ চেষ্টায় আয়ত্বে আনেন ইংরেজি ভাষাকে। ‘সার্চ ইংলিশ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন দয়াল। ডঃ মায়াস মুন্ডু , সন্দীপ মহেশ্বরী এবং লেস ব্রাউন-এর ইউটিউব ভিডিও দেখে বাড়াতে থাকেন ইংরেজিতে তাঁর দক্ষতা। ২০১৯ সালে অন্যদের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউটিউব -এ নিজের ভিডিও আপলোড করা শুরু করলে মানুষের প্রশংসা ও উৎসাহ দয়ালের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। এর পরপরই বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 10 Minutes School-এ দয়াল যুক্ত হন। 10 Minutes School-এ দয়ালের ইংরেজি শিক্ষার ভিডিওগুলি Motivetional ভিডিও হিসেবেই বেশী জনপ্রিয়তা পায়। মাধ্যমিক স্কুল থেকে শুরু করে সর্বমোট ৫ বছর কাল গ্রামাটিক্যাল এপ্রোচ এবং শুনে শুনে ইংরেজি শিখেছেন দয়াল।

দয়াল চন্দ্র বর্মন
ধান ক্ষেতে ভিডিও ব্লগিং করছেন দয়াল

২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর দয়ালের জীবনের একটি স্মরণীয় ক্ষণ। এই দিনে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলো’র রোববারের ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে দয়ালের ইংরেজির ফসল শিরোনামে খবরটা ছাপা হলে মুহূর্তেই দয়ালের সফলতার কাহিনী দেশজুড়ে ছড়িয়ে পরে। ইংরেজী বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন দয়াল চন্দ্র বর্মন। ফেসবুক ও ইউটিউব-এ লক্ষাধিক ফলোয়ার যুক্ত হন দয়ালের সাথে। ইউটিউব ও ফেসবুকে দয়ালের ঈর্ষণীয় সফলতা এবং ইংরেজী ভাষায় শুদ্ধভাবে অনর্গল কথা বলার পারদর্শিতার কারণে দেশের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ দয়াল চন্দ্র বর্মনকে বিভিন্ন ভাবে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা অনুষ্ঠানে মোটিভেশনাল স্পীকার হিসেবে ডেকে সম্মানিত করা হয়। দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলও তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন এবং তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ করে থাকেন। ইংরেজী বক্তা হিসেবে ভাইরাল হবার আগে 10 Minute School আয়োজিত জাতীয় ইংরেজী বক্তব্য প্রতিযোগীতায় সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০২৩ সালে দয়ালে পঞ্চগড় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। এখন অবধি (২০২৪) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়নরত।

সহজ সরল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, মেধাবী এবং আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দয়াল চন্দ্র বর্মন তাঁর বাবার সাথে মাঠে ধান চাষ করেন, পাওয়ার টিলার চালান, বাড়ির গাভী দেখাশোনা করার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা, নিজের লেখাপড়া ও স্থানীয় গরীব অসহায়দের সহযোগিতা করেন। এলাকার মানুষের বিভিন্ন সেবামূলক কাজেও তিনি জড়িত হতে ভালোবাসেন। বর্তমানে (২০২৪) দয়াল গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখছেন এবং নিজেকে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও পরিচিত করাতে চান। ভবিষ্যতে দয়াল যুব প্রজন্মকে সাথে নিয়ে Skill Development সহায়ক কাজ করতে চান।

…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের অন্যান্য স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ


ছবিঃ দয়াল চন্দ্র বর্মন
Last updated: 22 May 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

দয়াল চন্দ্র বর্মন
Facebook Page | YouTube Channel

  • ছাত্র
  • মোটিভেশনাল স্পিকার
  • কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
  • ইংরেজী বক্তা
  • ফ্রিল্যান্সার
  • মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
  • সোস্যাল মিডিয়া আইকন
  • সমাজ সেবক