২০০৯ সালের ২২ জুলাই (বুধবার) পঞ্চগড় থেকে দৃশ্যমান হয় শতাব্দীর সর্বশেষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। এইদিন (বুধবার) সকাল ৬টা থেকে চাঁদের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়তে থাকে। চাঁদের ছায়ামুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ সূর্য আবার উকি দেয় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে। পঞ্চগড় সদর তথা সমগ্র জেলায় লক্ষ লক্ষ লোক সমবেত হয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ অবলোকন করেন।
পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময় সূর্য পুরোপুরি হারিয়ে যায় চাঁদের ছায়ায়। শুধু চাঁদের চারপাশে ছিল সূর্যের আলোকচ্ছটা। পঞ্চগড় সহ দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনের বেলায় নেমে আসে রাতের আবহ। পশু-পাখিরা প্রকৃতির হঠাৎ এই পরিবর্তন দেখে স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলে। পূর্ণগ্রাস গ্রহণের স্থায়িত্ব ছিল ৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড। এটি ছিল একবিংশ শতাব্দীর দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ।
সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গবেষক ও কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমান পঞ্চগড়ে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া চা বাগানে স্থাপন করা হয় মূল কেন্দ্র। পঞ্চগড় শহরে স্টেডিয়ামে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। সেখান থেকে দেশী-বিদেশী অনেক চ্যানেলে সরাসরি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ সরাসরি সম্প্রচার করে। বিরল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে পঞ্চগড় স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি কিছু সংগঠন বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি জনগণকে দেয়।
পূর্ণ সূর্যগ্রহণ সন্ধিক্ষণে পঞ্চগড়ে অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে নিজস্ব উদ্দ্যোগেও সূর্যগ্রহণ দেখেন। খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা ক্ষতিকর হলেও মানুষজন সেদিন খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখছিলেন। মানুষ তখন মজা পায় যখন অন্ধকার হওয়ার ফলে হাঁস-মুরগি ও পাখিগুলো আবার ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। তাছাড়া যারা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে কিছুই জানত না তারা সেদিন খুব ভয় পেয়েযান। পূর্ণগ্রাস মুহূর্তে বাস, ট্রাকসহ সব যানবাহনে হেডলাইট জ্বালাতে দেখা যায়।
এছাড়া এই মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে। ডিসকাশন প্রজেক্ট, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ছায়ানট শিক্ষা কার্যক্রম নালন্দা, সমন্বিত শিক্ষা-সংস্কৃতি, বাংলাদেশ নেচার স্টাডি এন্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন, কসমিক কালচার নিয়ে গঠিত এই কমিটির মূল ক্যাম্প স্থাপন করা হয় পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের মাধুপাড়া গ্রামে এবং ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায়। এই পর্যবেক্ষণ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার ২০০ কিমি পথ পাড়ি দেয় গ্রহণ। গ্রহণের মূল রেখার দু’পাশের ২০০ থেকে ২৫৮ কিমি মধ্যে পূর্ণগ্রহণ দেখা যায়। আর এর ২০০০ কিমি পর্যন্ত দেখা যায় আংশিক গ্রহণ। সূর্যগ্রহণের মধ্যরেখা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করে আর মূল রেখা পঞ্চগড় জেলার ৪ কিলোমিটার উত্তর দিয়ে চলে যায়। বাংলাদেশে গ্রহণটির সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ০.৮৩-১.০০। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পূর্ণ গ্রহণ দেখা গেলেও বাংলাদেশের অন্য স্থান থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা গেছে। রাজধানী থেকে ৯৩ শতাংশ সূর্যগ্রহণ দেখা গেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভূটান, ,মায়ানমার, চীন, জাপানের দক্ষিনাংশ ও প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখা গেছে।
২০০৯ সালের এ সূর্যগ্রহণকে বিরল বলা হচ্ছে এ কারণে যে, আবার ১০৫ বছর পর বাংলাদেশ থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। সেটি হবে ২১১৪ সালের ২ জুন।
…আরো পড়ুন পঞ্চগড়ের অন্যান্য ঘটনা প্রবাহ
Last updated: 5 January 2024