নাট্যকার, সাহিত্যিক, শিশু সংগঠক, সাংবাদিক ও প্রভাষক রহিম আব্দুর রহিম। তিনি পঞ্চগড়ের বিদ্রোহী শিশু-কিশোর থিয়েটার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শিশুতোষ নাট্যকার ও নির্দেশক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন পঞ্চগড় বিদ্রোহী শিশু-কিশোর থিয়েটারের ব্যানারে, নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের মেধা, মনন ও উৎকর্ষ সাধনে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
রহিম আব্দুর রহিম শৈশব, কৈশোর থেকেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এম এ পাশ করার পর অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি প্রথমে স্কুলে ও পরবর্তীতে একটি মাদ্রাসায় বাংলা প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। রহিম আব্দুর রহিম বর্তমানে (২০২৪) পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের গলেহা হাট ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক হিসাবে কর্মরত আছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি একজন সম-সাময়িক কলাম লেখক এবং নিয়মিত নাট্যকার।
নাট্যকার ও নির্দেশক রহিম আব্দুর রহিম-এর প্রতিষ্ঠিত পঞ্চগড় বিদ্রোহী শিশু-কিশোর থিয়েটার এ যাবৎ পঞ্চগড়ের শিশুদের নিয়ে ৮টি আন্তর্জাতিক এবং ১২টি জাতীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। জনাব রহিম আব্দুর রহিম-এর লিখিত ২০টি নাটক এবং ৫০টির বেশি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোরিওগ্রাফি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশিত হয়েছে। ৭৪’র চুক্তি এবং তৎকালীন ছিটমহলবাসীদের করুণ জীবন চিত্র নিয়ে রচিত নাটক চুক্তির মুক্তি ২০১২ সালে ভারতের বারানাসিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে পরিবেশিত হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া পড়ে। এই নাটকের মধ্য দিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক নাট্যকার হিসেবে স্বীকৃতি পান। এর পরবর্তীতে আব্দুর রহিম ও তাঁর দল ভারতের দিল্লী, বারানাসি, শিলিগুড়ি, নিউ জলপাইগুড়ি কলিকাতা, কুচবিহার, আগ্রা, দার্জিলিং ও উড়িষ্যায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে প্রশংসা কুড়ান।
রহিম আব্দুর রহিম-এর প্রতিটি নাটকের বিষয়বস্তু সম-সাময়িক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুভিত্তিক। তাঁর নাটকের সংলাপ চয়নে উচ্চারিত হয়েছে অসাম্প্রাদয়িক চেতনা, মানবতা এবং পারস্পরিক বন্ধন সৃষ্টির স্লোগান। ২০১৪ সালে রংপুরের ৬৩ পদাতিক ডিভিশন এর জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার আয়োজিত এক নাট্য উৎসবে রহিম আব্দুর রহিম-এর লেখা ও নির্দেশিত নাটক বাংলা আমার মা মঞ্চস্থ হওয়ার পর আয়োজক কর্তৃক তিনি সৈনিক উপাধিতে ভূষিত হন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারতের উড়িষ্যায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্যউৎসবে তাঁকে নাট্য যাদুকর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। শিক্ষকতা পেশায় তিনি ২০০৪ সালে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। রহিম আব্দুর রহিম বাংলা একাডেমির সাধারণ সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের আজীবন ভোটার।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতা ও পারস্পরিক বন্ধন সৃষ্টিতে নাট্য আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় রহিম আব্দুর রহিম’কে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক কালিদাস এওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি ভারতের আসাম রাজ্যের বাকসা জেলার গড়েশ্বর কলেজ মিলানায়তনে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া বহুজাতিক ভাষাভাষিক নাটক, নাচ এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পদক প্রদান করা হয়। রহিম আব্দুর রহিম-এর হাতে পদক তুলে দেন অল ইন্ডিয়া জাতীয় শিল্প সংস্থার সভাপতি গিরিরাজ জামেনি। অল ইন্ডিয়ার জাতীয় অভিনয় শিল্প সংস্থা এবং আসামের তক্ষশিলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসাম রাজ্যের এমপি বিশ্বজিৎ দাইমারী।
ভারতের ন্যাশনাল পারফর্মিং আর্টস এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিএএআই) ও তক্ষশীলা কালচারাল অর্গানাইজেশন আসাম প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় মহাকবি কালিদাস এওয়ার্ড প্রদান করে থাকে।
Last updated: 31 January 2024