মহারাজার দীঘি – Maharajar Dighi

মহারাজার দিঘী - Maharajar Dighi

অমরখানা ইউনিয়ন, পঞ্চগড় সদর।

ম্যাপঃ Google Map
ফোন/মোবাইলঃ n/a
ফেসবুক পেজঃ n/a
ওয়েবসাইটঃ n/a

প্রায় ৫৪ একর আয়তনের মহারাজার দীঘি পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পুকুর। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এই বিশালায়তনের জলাশয় পঞ্চগড় জেলা শহর হতে ১৪ কিমি উত্তর-পূর্ব কোণে অমরখানা ইউনিয়নে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত। সমতলের সবুজ চা–বাগানবেষ্টিত, ভারত সীমান্তঘেঁষা, কোলাহলমুক্ত, গাছগাছালির নিবিড় ছায়ায় ঘেরা ভিতরগড় দুর্গনগরীসহ প্রায় ১৫ শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মহারাজার দিঘীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

মহারাজার দিঘি দেখতে প্রতি বছর শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ায় থেকে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। দিঘির চারপাশের সুউচ্চ প্রশস্ত পাড় দিয়ে বৃক্ষরাজির ছায়ায় হেঁটে হেঁটে পর্যটকেরা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন প্রকৃতির মাঝে। দর্শনার্থীরা নৌকায় ঘুরে বেড়ান দিঘীর পানিতে। শীতকালে দিঘীর পাড়ের সবুজ গাছগাছালিতে অতিথি পাখির কলকাকলি দিঘীর পাড়ে তৈরি করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। দিঘীর চারপাশ সবুজ গাছের সমারোহে সারাক্ষণই পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে।

মহারাজার দীঘির রয়েছে ১০টি বাঁধানো ঘাট। ঘাটের উভয় পাশে ইট ও মাটি দিয়ে নির্মিত সুউচ্চ পাড় সবুজ গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা। দীঘির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এর প্রবেশপথের দুই পাড়ের দুটি সিঁড়ি। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের দিন, দিঘীর পাড়ে মেলা বসে। সব বয়সের ছেলেমেয়ে ও বয়োবৃদ্ধদের পদচারণায় মুখরিত হয় মহারাজার দিঘীর পাড়। উক্ত মেলায় সীমান্তের ওপারের স্থানীয় ভারতীয়দের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসা পর্যটকদের বেশির ভাগই দৃষ্টিনন্দন মহারাজার দীঘিও ঘুরে যান। দীঘির পাড়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিস্তীর্ণ জলরাশির ঢেউ আর নানান পাখির কূজনে মোহিত হন তাঁরা।

মহারাজার দীঘির আয়তনঃ পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় ও সোনারবান মৌজায় অবস্থিত। দিঘীর পাড়সহ মহারাজার দীঘির আয়তন ৫৩.৭৯ একর। মহারাজার দীঘি পাড়সহ উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৮০০ গজ ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থ ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। খরা মৌসুমে দীঘির পানির গভীরতা থাকে ৪০-৫০ ফুট। বর্ষা মৌসুমে এই গভীরতা আরো বেড়ে যায়। প্রায় ২৫ বর্গকিমি জায়গাজুড়ে ঐতিহাসিক ভিতরগড় দুর্গনগরীর দৃশ্যমান স্থাপনার অধিকাংশই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও এখনো টিকে রয়েছে ঐতিহাসিক মহারাজার দিঘী।

মহারাজার দিঘীর ইতিহাসঃ ইতিহাস ও স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য মতে ২৫ কিমি এলাকাজুড়ে জল্পেশ্বর রাজার ভিতরগড় দুর্গনগরীর সীমানা ছিল। এটি ছিল তাঁর রাজধানী। কামরুম বুরুঞ্জীতে রাজা জল্পেশ্বরকে বলা হয় পৃথু রাজা। মহারাজার দিঘী থেকে মাত্র ১৩৫ মিটার দুরে পৃথু রাজার বাড়ি ছিল বলে অনেকের ধারণা। ভিতরগড় দুর্গনগরীর বাইরের আবেষ্টনীর উত্তরাংশ, উত্তর-পশ্চিমাংশ এবং উত্তর-পূর্বাংশে বর্তমানে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা। প্রাচীন বাণিজ্য সড়ক ও নদীপথের ওপর অবস্থিত হওয়ায় ভিতরগড় এলাকার অধিবাসীরা সম্ভবত নেপাল, ভুটান, সিকিম, আসাম, কোচবিহার, তিব্বত, চীন, বিহার এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিল।

১৮০৯ সনে স্যার ফ্রান্সিস বুকানন প্রত্নস্থল জরিপ করেন এবং সেখানের অধিবাসীদের কাছ থেকে ধারণা করা হয়, ষষ্ঠ শতকের শেষে কিংবা সপ্তম শতকের শুরুতে ভিতরগড় একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। রাজ্য পরিচালনার পাশাপাশি ভিতরগড়ে পৃথু রাজা নির্মাণ করেছিলেন রাজপ্রসাদ ও মন্দির। তিনি খনন করেন বিশাল এই দিঘী। যা মহারাজার দিঘী নামে পরিচিতি লাভ করে। সময়ের ব্যবধানে পৃথু রাজা কিচক নামের অসাধু ও নিম্নবর্ণের জনগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হলে নিজ পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় পরিবার পরিজন ও ধনরত্ন সহ মহারাজার দিঘীতে আত্মহত্যা করেন। রাজার রক্ষীবাহিনীও তাঁকে অনুসরণ করে। সেই সাথে অবসান ঘটে পৃথু রাজার রাজত্বের।

স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, একসময় স্থানীয় লোকজন বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান আয়োজন করলে, আগের দিন দিঘীর পাড়ে গিয়ে থালাবাসনের কথা বলে আসতে হতো। অনুষ্ঠানের জন্য দিঘীর পাড়ে অদৃশ্যভাবে প্রয়োজনমতো চলে আসত থালাবাসন, ব্যবহারের পরে তা পরিষ্কার করে ফেরত দিতে হতো। এ ছাড়া পারিবারিক বা সাংসারিক নানান সমস্যা নিয়ে দিঘীর পাড়ে মানত করেও ভালো ফল পেতেন স্থানীয় লোকজন। তবে এখন সেই চিত্র না থাকলেও বিশাল দিঘীর জলরাশিজুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্য।

অবস্থানঃ পঞ্চগড় শহরের উত্তর-পূর্ব কোণে, পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে অমরখানা ইউনিয়নে মহারাজার দিঘীর অবস্থান।

কিভাবে যাবেনঃ স্থানীয়ভাবে যেতে চাইলে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে তেঁতুলিয়াগামী বাসযোগে বোর্ড অফিস নামক স্থান হয়ে রিক্সা/অটো-ভ্যান যোগে পূর্বদিকে ৫ কিমি পথ। এছাড়া পঞ্চগড় থেকে প্রাইভেট কার/মাইক্রো ভাড়া করে, মহারাজার দীঘি পৌঁছানো সহজতর। Travel Tips | Accommodation | Tourist Spots

 


তথ্যসূত্রঃ রাজিউর রহমান
ছবিঃ ফিরোজ আল সাবাহ
Last updated: 3 February 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn