নাজমুল হক প্রধান একজন দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজন্ম সংগ্রামরত এই মানুষটি বাংলাদেশের সমাজ ও ইতিহাসের প্রতি দ্বায়বদ্ধ। নাজমুল হক প্রধান একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য, তিনি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘মশাল’ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নাজমুল হক প্রধান ১৯৫৭ সালে পঞ্চগড়ের সদর ইউনিয়নের বসুনিয়াপাড়া গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম বাছির উদ্দিন প্রধান ও মাতা নাজমা খাতুন। তারা ১০ ভাই-বোন। নাজমুল হক প্রধানের শৈশব-কৈশোর পঞ্চগড়েই কেটেছে।
নাজমুল হক প্রধান পড়াশোনা শুরু করেন স্থানীয় দেবত্তর বসুনিয়া পাড়া প্রি প্রাইমারি স্কুলে। এখান থেকে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে জগদল হাইস্কুল থেকে ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন (১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিতব্য)। এরপর ১৯৭৪ সালে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৬ সালে দিনাজপুর সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে বিএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার সময় দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্শাল সামরিক আইনে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। প্রায় ২০ মাস পর মুক্তি পেয়ে তিনি বিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। ১৯৭৯ সালের দিকে বিএ প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন নাজমুল হক।
১৯৬৭ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থা দিনাজপুরে বড় বোনের বাসায় গেলে সেখানে এক বড় ভাই (ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত) নাজমুল হক প্রধানকে রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত করেন। ১৯৬৯ সালে জগদল উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে তিনি স্কুলের জেনারেল ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতিতেও তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেসময় বালক বেলাতেই তিনি পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সদস্য হয়ে তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হলে স্থানীয়ভাবে তিনি মিছিল করে প্রতিবাদ করেন। ১৯৭০ সালে “পাকিস্তান; দেশ ও কৃষ্টি” আন্দোলনে এবং নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৭১ সালে এসএসসি পরিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি বিএলএফ (মুজিব বাহিনী)র সদস্য হিসাবে ভারতের মিলিটারি একাডেমীর তান্ডোয়া প্রশিক্ষন ক্যাম্পে বিশেষ গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ সালে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন নাজমুল হক প্রধান। ১৯৭৪ সালে জেলা ফোরামের সদস্য (সাত জনের মধ্যে একজন)। এই ফোরামের কাজের মধ্য দিয়েই গণবাহিনী তৈরি হয়। ১৯৭৬ সালে মার্শাল আইনে গ্রেপ্তার হন তিনি। মুক্তির পর ১৯৭৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (গোপনে)। ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ধারা)এর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যও হন। ১৯৮০ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক এবং ৮৩ সালে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন নাজমুল। ১৯৮৫ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৮ সালে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন (জাসদপন্থী)।
১৯৯০ সালে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসাবে সৈরাচার বিরোধী ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। একজন সফল ছাত্রনেতা হিসাবে সেসময় তিনি থাইল্যান্ড, হংকং, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেপাল ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সেমিনারে অংশগ্রহন করেন।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুবজোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। বর্তমানে (২০২৩) জনাব নাজমুল হক প্রধান বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ১৪ দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে নাজমুল হক প্রধান দুই ছেলের পিতা। তার বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে গ্রামে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। আর ছোট ছেলে ঢাকায় বাবার সঙ্গে থাকেন। তার স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম।
তথ্যসূত্রঃ probash-mela.com | Nazmul Haque Prodhan Community
Last updated: 5 November 2023