মজাহারুল হক প্রধান পঞ্চগড়ের জননন্দিত রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য। তিনি পঞ্চগড় ১ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জনাব মজাহারুল বর্তমানে (২০২৩) পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
মজাহারুল হক প্রধান ১ জানুয়ারি ১৯৫৩ সালে পঞ্চগড় জেলার বুড়িপাড়া দ্বারিকামারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মমতাজ উদ্দিন প্রধান এবং মাতা মহছেনা খাতুন।
১৯৬৫ সালে তেঁতুলিয়া পাইলট হাইস্কুল জীবনে ছাত্রলীগের পতাকাতলে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন মজাহারুল হক। তিনি ১৯৬৭ এর ৬ দফা আন্দোলনের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ব্যাপক আহত হন। ১৯৬৮ সালে রংপুরে কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় সদ্য গঠিত রংপুর কলেজ ছাত্রলীগ শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদ দপ্তর সম্পাদক এর দ্বায়িত্ব অর্পিত হয় মেধাবী ছাত্র মোজাহারুল হক প্রধানের উপর। ১৯৬৯ এর ১১ দফা আন্দোলন এবং নির্বাচন-এর সংগ্রাম জনাব মজহারুলের ছাত্ররাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর পলাশবাড়ী সফরকালে মোজাহারুল পান বঙ্গবন্ধুর স্নেহের ছোঁয়া। বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল মোজাহারুল হক প্রধানের। বঙ্গবন্ধু সেই তরুণ মজহারুলের কাঁধে হাত রাখেন। জনাব মজহারুলের জন্য এই ঘটনা ছিল তাঁর ছাত্র রাজনীতির স্বীকৃতিস্বরূপ, ছিল এক অনন্য অনুপ্রেরণা। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে সেই অনুপ্রেরণাই তাকে গড়ে তোলে বৃহত্তর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে।
১৯৭১ পরবর্তীতে মজাহারুল হক প্রধান আবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিদ্ধ লাভ করেন এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে। ১৯৭৪ সালে সাবেক National Students Federation (NSF) -এর দ্বারা এক ভয়াবহ হামলার শিকার হন মজাহারুল হক প্রধান, রাজনৈতিক এই হামলায় জনাব মজহারুলের পায়ের রগ কেটে ফেলে তাঁকে জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। আহত মজহারুলকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক ভাবে পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) নেওয়া হলে বঙ্গবন্ধু নিজেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধু সে সময়ে জনাব মজহারুলের হাতে ৭০০ টাকা ধরিয়ে দেন। মজাহারুল হক প্রধানের পায়ে আজও রয়েছে সেই ক্ষতচিহ্ন।
১৯৭৪ সালে জাহারুল হক প্রধান বৃহত্তর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নিহত হলে মজাহারুল হক প্রধান রাজনৈতিক কারণে ছাত্র জীবনের ইতি টেনে ফিরে আসেন পঞ্চগড়ে। ৬/৭ জনকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় এক দোকানকে গোপনে বঙ্গবন্ধুসহ নিহত সকলের আত্মা মাগফিরাতের জন্য দোয়া আয়োজন করেন। দোয়ায় ইমাম বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে বিপাক বাধালে কিছুটা চাপ প্রয়োগ করেই ইমামকে দিয়ে দোয়া শেষ করানো হয়।
মজহারুলের তদারকিতে তখন ছাত্রদের হাতে লিখা পোষ্টার-লিফলেটে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করা হয়। ভোররাতে পোস্টার লাগাতে গিয়ে পুলিশের কাছে তাড়া, পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার কিংবা কিছু সময় আটক রাখার অসংখ্য নজির রয়েছে তাঁর জীবনে। ছাত্ররাজনীতির সেই কঠিন অকারণে জেল-জুলুম সহ সামাজিকভাবে হেয় করা ছিল এক নিয়মিত ঘটনা।
মজাহারুল হক প্রধান জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেলে ১৯৭৬ পরবর্তী সময়ে গোপনে এবং ১৯৮০ থেকে স্ব-গৌরবে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার অভিযান চালিয়ে যান। মজাহারুল হক প্রধান ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেন।
১৯৮৪ সালে জনাব মজাহারুল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৫ সালে মজাহারুল হক প্রধান পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মজাহারুল হক প্রধান পঞ্চগড় ১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি জমির উদ্দিন সরকারকে ৫৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মজাহারুল হক প্রধান মনোনীত হবার পরে শেখ হাসিনার নির্দেশে মহাজোটের শরিক দলকে আসনটি ছেড়ে দেন। একই সময়ে (২০১৪ সালে) মজাহারুল হক প্রধান জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মনোনীত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমিরকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার পঞ্চগড় ১ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। তাঁদের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল ৪১,৩৪৯।
সৎ সাহসী সাবেক ছাত্রনেতা থেকে হয়ে ওঠা জননেতা জনাব মজাহারুল হক প্রধান সময়ের সাথে তাঁর মেধা এবং সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সমগ্র পঞ্চগড়বাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
Last updated: 2 December 2023