কাজী শাহেদ আহমেদ – Kazi Shahid Ahmed

কাজী শাহেদ আহমেদ পঞ্চগড়ে পাথরে ফুল ফুটানো আর সমতল ভূমিতে চা উৎপাদন সাথে হারিয়ে যাওয়া পাটের ঐতিহ্যকে
সমন্বিত করার মহাপ্রয়াসের কিংবদন্তি উদ্যোক্তা। কাজী শাহেদ আহমেদের জেমকন লিমিটেডকাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট -এর সফল উদ্যোগ পঞ্চগড়কে দিয়েছে উন্নতির ছোঁয়া। পঞ্চগড়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি, শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রণী পথিকৃত। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত কাজী টি দেশের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। পঞ্চগড় কাজী শাহেদ আহমেদ’কে মনে রাখবে চির কৃতজ্ঞতায়

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কাজী শাহেদ আহমেদ ছিলেন মেধাবী ছাত্র, প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা, বিশিষ্ট শিল্পপতি, সাংবাদিক, প্রকাশক ও সম্পাদক, লেখক, উপন্যাসিক, ক্রীড়া অনুরাগী, সংগঠক, সমাজসেবক এবং একজন সফল উদ্যোক্তা। একজন আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী কাজী শাহেদ আহমেদ পেশাগতভাবে একজন ব্যবসায়ী হলেও তিনি ব্যবসা করেননি – তিনি ব্যবসা সৃষ্টি করেছেন, উদ্যোক্তা তৈরী করেছেন, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। কাজী শাহেদ আহমেদ একটি সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলতেন, ভবিষ্যৎ হবে সবুজ এবং অর্গানিক। কাজী শাহেদ আহমেদ শখের বশে নয়, বরং দায়বদ্ধতা থেকে অর্গানিক প্রকল্পের উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করেছেন।

তেঁতুলিয়ায় কাজী অ্যান্ড কাজী চা বাগানে স্ত্রী আমিনা আহমেদের সঙ্গে কাজী শাহেদ আহমেদ।

কাজী শাহেদ আহমেদ প্রতিষ্ঠিত জেমকন লিমিটেড পঞ্চগড়ের প্রধান খনিজ সম্পদ নুড়িপাথর ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক খুঁটি তৈরির মাধ্যমে নুড়িপাথর শিল্পের ব্যাপক প্রসার ও পরিচিতি এনে দেয়। কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক চা শিল্পের গোড়াপত্তন করেন কাজী শাহেদ আহমেদ। কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট বাংলাদেশের প্রথম অর্গানিক চা বাগান। কাজী শাহেদ আহমেদের উদ্যোগে পঞ্চগড়ে উৎপাদিত হচ্ছে বিশ্ব নন্দিত অর্গানিক চা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন নিত্য পণ্যের চেইন শপ মীনা বাজার। পঞ্চগড় রয়েছে কাজী শাহেদ আহমেদ প্রতিষ্ঠিত কাজী ফার্ম, অর্গানিক চা ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, আনন্দধারা রিসোর্ট সহ আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান।

১৯৪০ সালের ৭ই নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারত বাংলার প্রথম ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোর শহরের পুরাতন কসবার কাজী পাড়ার কাজী আনিসুর রহমান ও হাজেরা খাতুন দম্পতির ঘর আলোকিত করে কোলজুড়ে আসেন কাজী শাহেদ আহমেদ। কাজী শাহেদ আহমেদের স্কুল জীবন কাটে যশোর মুসলিম একাডেমিতে, এরপর তিনি যশোর এম এম কলেজে পড়ার সময় স্কলারশিপে লাহোর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৬৫ সালে সিভিল অ্যান্ড স্কলারশিপে পড়ার কারণে আর্মিতে ডাক পান। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আগমনের উদ্দেশ্যে তিনবার সীমানা পার হতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন। তারপর স্ত্রী পুত্রসহ পাকিস্তানের বন্দী জীবন কাটিয়ে ১৯৭৩ সালে প্রত্যাবর্তন করেন মাতৃভূমিতে। কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রতিষ্টাকালীন প্লাটুন কমান্ডারদের একজন ছিলেন। সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ১৪ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ১৯৭৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ থেকে অবসর নেন।

কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৮২ সালে জেমকন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে তাঁর কর্ম জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন। পরবর্তীতে জেমকন গ্রুপ-এর অধীনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জেমকন লিমিটেড, কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট, চরকা স্টিল লিমিটেড, মীনা ক্লিক, জেমকন সিটি লিমিটেড, জেম জুট, জেমিনি সি ফুড, মীনা সুইটস এবং বেঙ্গল হারবাল গার্ডেন লিমিটেড।

বাংলাদেশে আধুনিক সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক কাজী শাহেদ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে ৯০-এর দশকে কাজী সাহেদ আহমেদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আজকের কাগজ পত্রিকা। কর্মজীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন আধুনিক আজকের কাগজ পত্রিকা। যার সফলতার ইতিহাস স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে। এছাড়া তিনি আজকের কাগজ পত্রিকার পাশাপাশি খবরের কাগজ নামের একটি সাপ্তাহিকের প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। কাজী শাহেদ আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলাদেশ ট্রিবিউন -এর প্রতিষ্ঠাকারী।

সাহিত্য পরিমণ্ডলেও কাজী শাহেদ আহমেদ পরিচিত, তাঁর লেখার গাঁথুনি পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১৯৯৫ সালে তাঁর প্রথম গ্রন্থ আমার লেখা প্রকাশিত হয়। একই বছর দ্বিতীয় বই ঘরে আগুন লেগেছে, ২০১৩ সালে প্রথম উপন্যাস ভৈরব, ২০১৪ সালে আত্মজীবনী জীবনের শিলালিপি এবং উপন্যাস পাশা প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে উপন্যাস দাঁতে কাটা পেনসিল, ২০১৮ সালে উপন্যাস অপেক্ষা প্রকাশিত হয়। ইতিমধ্যে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে ভৈরব উপন্যাসটি।

কাজী শাহেদ আহমেদ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল। ৭৫ পরবর্তী সময়ে ক্লাবের দুর্দিনে তিনি আবাহনীর হাল ধরেন। ১৯৯১ থেকে ক্লাব লিমিটেড হবার পর ডাইরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে কাজী শাহেদ আহমেদ অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান University of Liberal Arts Bangladesh – ULAB প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মুন্সী মেহেরুল একাডেমী, কাজী শাহেদ আহমেদ মডেল কলেজ, রাহেলাপুর দাখিল মাদ্রাসা, আমিনা আহমেদ জি টি মডেল বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থায়ন করেছেন। এছাড়া ঝাউদিয়া গ্রামে কাজী শাহেদ আহমেদ লাইব্রেরী স্থাপন করেন। কাজী শাহেদ আহমেদ ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন কাজী শাহেদ আহমেদ।

কাজী শাহেদ আহমেদের দাম্পত্য সঙ্গী স্ত্রী আমিনা আহমেদ একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। তাঁদের তিন ছেলের মধ্যে কাজী নাবিল আহমেদ জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি। মেজো ছেলে কথাসাহিত্যিক ডক্টর কাজী আনিস আহাম্মেদ জেমকন গ্রুপের পরিচালক এবং ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলাদেশ ট্রিবিউন-এর প্রকাশক এবং ঢাকা লিড ফেস্ট-এর পরিচালক। ছোট ছেলে কাজী এনাম আহমেদ জেমকন গ্রুপের পরিচালক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক।

কাজী শাহেদ আহমেদ ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ঃ১৫ মিনিটে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

 


তথ্যসূত্রঃ বি এম ইমরান হোসাইন | সাজ্জাদুল ইসলাম নয়ন | আজিম পাটোয়ারী নতুন
ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
Last updated: 6 February 2024

Share:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

কাজী শাহেদ আহমেদ - Kazi Shahid Ahmed
(৭ নভেম্বর ১৯৪০ — ২৮ আগস্ট ২০২৩)

  • সামরিক কর্মকর্তা
  • শিল্পপতি ও উদ্যোক্তা
  • সাহিত্যিক, প্রকাশক ও সম্পাদক
  • প্রতিষ্ঠাতা - দৈনিক আজকের কাগজ
  • প্রতিষ্ঠাতা - ঢাকা ট্রিবিউন
  • প্রতিষ্ঠাতা - বাংলা ট্রিবিউন
  • প্রতিষ্ঠাতা - জেমকন গ্রুপ
  • প্রতিষ্ঠাতা - জেমকন লিমিটেড
  • প্রতিষ্ঠাতা - কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট
  • প্রতিষ্ঠাতা - চরকা স্টিল লিমিটেড
  • প্রতিষ্ঠাতা - মীনা ক্লিক
  • প্রতিষ্ঠাতা - জেমকন সিটি লিমিটেড
  • প্রতিষ্ঠাতা - জেম জুট
  • প্রতিষ্ঠাতা - জেমিনি সি ফুড
  • প্রতিষ্ঠাতা - মীনা সুইটস
  • প্রতিষ্ঠাতা - বেঙ্গল হারবাল গার্ডেন লিমিটেড
  • প্রতিষ্ঠাতা - ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ